২৮ জন বাউলকে গান গাওয়ার অপরাধে মসজিদে নিয়ে তওবা পড়িয়ে চুল দাড়ি কেটে কেটে নেওয়া হলো। ঘটনাটি ঘটিয়েছেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা কর্মী। আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত এবং আমাদের সংস্কৃতিরও ধারক বাহক নাকি তারাই। অথচ তাদের কাছ থেকেই এমন সাম্প্রদায়িক আচরন! এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা শুধু বাউলদেরই অপমান করলেন না, দেশীয় সংস্কৃতিকেও আঘাত করলেন। জামাত আর ইসলামী দলগুলোর মতো আচরন!
ঘটনাটা ছিল এরকম :
রাজবাড়ি পাংশা উপজেলার হাবাসপুর। গত ৫ এপ্রিল লালনভক্ত প্রবীণ বাউল মোহাম্মদ ফকিরের বাড়িতে সাধু সংঘের দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজবাড়ি, কুষ্টিয়া, পাবনা থেকে ২৮ জন লালন ভক্ত আসেন। সমাপনি দিনে তারা ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র দিয়ে গান করছিলেন। এ সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা গিয়ে লালন ভক্তদের লাঞ্ছিত করে। ঘঠনার এখানেই শেষ নয়। প্রভাবশালী ওইসব বীরপুত্ররা লালনভক্তদের মসজিদে নিয়ে গিয়ে গান না গাওয়ার বিষয়ে তওবা পড়ান। তওবা শেষে লালন ভক্তদের লম্বা চুল-দাড়ি ও গোফ কেটে দেন।
যারা মহান (!) ইসলাম রক্ষার্থে এই ধর্মযুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। এদের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী নেতা কালিকাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিউর রহমান নবাব হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, ‘মুসলিম ধর্মীয় রীতি না মেনে বাউলরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জিন্দা ফয়তা ও এক ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ অনুষ্ঠানের নামে মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করছিল। এটা এলাকার মুসল্লিরা মেনে নিতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে বাউলদের সঙ্গে আলোচনা করার সময় এলাকার কিছু যুবক তাদের চুল ও গোঁফ কেটে দেয়।’
নিউজটা পেলাম ফেসবুকে কালের কন্ঠের এক সাংবাদিকের প্রথাইলে। ফেসবুক লিংক:২৮ বাউলের তৌওবা পড়া ও আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়ীকতা।
আওয়ামী লীগের আসলে দোষ দিয়ে লাভ নাই। ইসলাম শুধু একটা ধর্ম হিসেবেই এদেশে প্রবেশ করে নি, ধর্মের সাথে ইসলামী রাজনীতি আর আরবীয় সংস্কৃতি নিয়েও প্রবেশ করেছে। এদেশে ইসলাম প্রসারের সময় থেকেই দেশীও সংস্কৃতির সাথে ইসলামী সংস্কৃতির একটা সংঘর্ষ চলছে। এ দুয়ের যুদ্ধের মধ্যে এখন আবার নতুন করে হিন্দী সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করেছে। চলছে ত্রিমুখী সংঘর্ষ। বাংলা সংস্কৃতির অবস্হা শোচনীয়। দেশের ক্ষুদ্র একটা অংশ বাঙালি সংস্কৃতি এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন। তাতেও কত বাঁধা! বোমা হামলা, ভয় ভীতি, লাঞ্চনা আরো কত কি! শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া যাবে না, তা নাকি শিরক! ১লা বৈশাখে বের হওয়া যাবে না, এটা নাকি হিন্দু সংস্কৃতি! লালন বাউল শোনা যাবে না, মূর্তি স্হাপন করা যাবে না, সবকিছুতে আরবী লেখা থাকতে হবে, বাংলা না থাকলেও চলবে! এই হলো আমাদের ইসলাম! সর্বকালের সেরা ধর্ম!
আপনি কোন ক্যাটাগরির! যদি ইসলাম পুরোপুরি পালন করেন তাহলে কিন্তু দেশীও সংস্কৃতিকেও বাদ দিতে হবে! যদি সংস্কৃতি আর ইসলাম দুটোই ধরে থাকার ইচ্ছা থাকে তাইলে কিন্তু ইসলাম পুরোপুরি পালন করতে পারবেন না, নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে হবে। কোরান হাদিসের ভাল দিকগুলো গ্রহন করতে হবে আর খারাপ দিকগুলো বর্জন করতে হবে। এতে কিন্তু রিস্কও আছে – আলেম সমাজের রোসের শিকার হতে পারেন যেকোন সময়, আপনাকে মুরতাদ ঘোষনা করা হতে পারে, কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের সময় বোমা হামলায় জীবন যাওয়ারও রিস্ক আছে। আর নাস্তিকরা স্বাধীন, ধর্মের কোন বাধা নিষেধ তাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে না, তাদের কাছে সবগুলো ধর্মই বর্বর এবং এটাই সত্যি।
বিএনপি, লীগ, জামাত সবগুলো দলের মধ্যেই সাম্প্রদায়িকতা আছে। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত বাঙালী সংস্কৃতি!
আজ বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে এ ঘটনার বিরুদ্ধে।