খবরটা সবার জানা। একমত আমরা সবাই। একবাক্যে বিচার চাই। চাই মানবাধিকার বাস্তবায়ন। এ কি কান্ড! শিউড়ে ওঠার মতো, চোখ উপড়ে ফেলে দিতে গিয়ে, উপড়ানোর সম্পূরক ঘটনা ঘটেছে। তাও আবার আমাদের ম্যাডামকে! কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা একমত: শাস্তি, শাস্তি এবং শাস্তি হোক অপরাধীর।
পৃথিবীর সৌন্দর্য যে কয়েকদিন আগেও আলোকিত ঝলকে দেখেছে, তিনি আজ কেবল ছুঁয়ে ছুঁয়ে বুঝবেন – এটা কেমন হলো? অন্য কোন ভাবে হলে মেনে নেওয়া সহজ হতো কিন্তু ভালোবাসার প্রতিদানে দু’চোখের সাথে ভালোবাসারও মৃত্যু হলো, এ কাম্য নয়। কাম্য নয় সে আচরনের। কাম্য নয় নীতিবিরুদ্ধগামীতার। আমি নারীর পক্ষে এবং পুরুষেরও পক্ষে। যেকোন একপক্ষে গেলে ভারসাম্যহীন হবে। সব ঘটনারই প্রেক্ষিত থাকে, তেমনি এ লোমহর্ষক ঘটনারও হয়তো কোন প্রেক্ষাপট আছে।
‘চোখ’ কেন উপড়ে ফেলতে চায়, তাও সেটা ভালোবাসার মানুষের। তাও আবার সংসারের যে মানুষটি বর্তমানে একমাত্র কর্মক্ষম, তাঁর। সব অঙ্কই উল্টো হয়ে যায়। আমার দৃষ্টিতে বর্তমানে অধিকাংশ প্রেম করে বিয়ে করার পর স্ত্রীর ভূমিকা দেবতার মত হয় আর পুরুষ তখন নেড়ি কুকুর। দেবতা তখন পোষা কুকুর নিয়ে খেলে। মাঝে মাঝেই পারিবারিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তৈরী হয় ছোট ছোট কলহ, ছোট ছোট কলহের সাথে পুরোনো অভিযোগের রেকর্ড বাজে জোড়ছে। নেড়ি কুকুর সেগুলো শোনে আর ‘বাঘ’ হবার স্বপ্ন দেখে। ভাবে একদিন সমস্ত সমাজ গিলে ফেলবো, একদিন আকাশে বাতাসে দেবতার রক্তে জোস্না রাঙাবো, রক্তের ঢেউয়ের উপর ভাসবে আমার বিগত প্রেমের ভেলা।
শারীরিক একঘেয়েমিতে প্রেমের কাঠামো নড়ে চড়ে ওঠে, শক্ত থাকে না, দুজন দুজনের অঙ্গ পরিষ্কারভাবে চিনে ফেলার পর প্রেম বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে উড়ে যায় আকাশে। বিয়ের পর বেকার স্বামী কাম্য নয়। তাতে সমস্যা বহুগুন জ্যামিতিক হারে বাড়ে। শিক্ষিত সমাজে এখন পুরুষ নির্যাতন কম হয় না। একটু বেশীই হয়। আর অশিক্ষিত পরিবারে নারীরা এখনও জুতার গোড়ালি দিয়ে পিষ্ট হচ্ছে দিনে ৬৯ বার। প্রেম তবু দোষ নয়, গুণ। তবে যোগের পর বিয়োগ বেশী।
নারী যত বলে, পুরুষ ততো ছেঁটে বলে “পুরুষত্ব” রক্ষার্থে। কিন্তু যে পুরুষ স্ত্রীর উপর তার ভরন পোষণের দায় দিয়ে আত্মসমর্পণ করে, সে কেন বাঘ হতে চায়? এটা অন্যায়, এটা অপরাধ। তবু যেন কোথায় এলোমেলো, কোথায় যেন মস্ত বড় গোলমেলে বাঁধে। মাংসাসী অভ্যাস ছাড়েনি তাই সে চিন্তা করেনি কোনটি কোথাকার মাংস নাক না কান। বোঝা যায়, পুরুষ শাসিত সমাজ চুপ করে থাকে মাত্র, ভেতরে চিন্তার তেমন পরিবর্তন হয়নি, যেকোন সময়ের জন্যই এটা ভয়ংকর। এক্ষেত্রে উষ্কানী অনুচিৎ।
ভিতরে ভিতরে প্রতিটি জীবনে সীমাহীন ঘটনা থাকে। ইতিহাস কেবল রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কিংবা কবীন্দ্র পরমেশ্বর নয়, প্রতিটি জীবনের কিছু স্বচ্ছ, কিছু অস্বচ্ছ প্রপঞ্চ থাকে। হোক না সে হেড মৌলভি, বাইরে কেবল আকার আর রঙ। ভেতরে কখনও রঙিন, কখনো রঙহীন। কত যে ঘটনার পর একটি অস্বাভাবিক আকাঙ্খা বা ক্রোধের জন্ম হয়, তা জানা নেই কারো। তবে জানি বিল্পব একদিনে সৃষ্টি নয়। কিছু কিছু অঘটন অতীত অনেক শুভ ঘটনার পতন দেখায় দ্রুত।
তত্ত্ব দিয়ে মালিন্য থামানো যায় না, কিভাবে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যুদ্ধ এড়ানো যায়, সেসব কৌশলও মাঝে মাঝে অর্থহীন। বাগ বিতন্ডার সময় কারো স্বাভাবিক রক্তচাপ থাকে না, মুন্ডু আমরা সবাই কামড়াতে চাই, রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে। তবে অধিকাংশই নিয়ন্ত্রন করি নিজেকে, কেউ কেউ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে মুন্ডু খেয়েই বসে, অনেকটা নিয়ন্ত্রনহীন গাড়ির মতো। এখানে ইড, ইগো, সুপার ইগো কম গুরুত্বের নয়। বিশ্লেষকরা ঘটনার পরে ঘটনার ব্যবচ্ছেদ করেন। ব্যবচ্ছেদের সময় এমন ভাব ধরেন যেন জীবনে তিনি বিতন্ডা বা কলহে অংশ নেন নি। বাস্তব কি তাই! হয়তো তিনিও কখনও মুন্ডুর কাছে গিয়ে হা করা মুখ হঠাৎ বন্ধ করে ফেলেছেন। তবে এটাই ঠিক, বিতন্ডে যতটা পারা যায় অংশগ্রহন কমানো উচিত, নইলে সবকিছু পুড়ে হবে ছাই, পরিবার হবে অদৃশ্য।
মালিন্য হয়, বিতন্ডা হয়, হয় ছাড়াছাড়িও। তারপর বেশ কিছু সময় গড়িয়ে যায়, লোকজন সেসব কথা যখন প্রায় ভুলে যায়, তখন আবার তারা পূর্বের মতো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখে। চোখের জলের নোনতা স্বাদ মিষ্টি হতে থাকে, মিলিত হবার আকুল বাসনা জাগে, বাঁধা হয়ে যায় সংস্কৃতি, বাঁধা হয় লোককথা, বাঁধা হই তুমি আর আমি। ঘৃণাও থাকে বাসনার ভিতর, ঘৃণা মিশ্রিত প্রেম আবার একত্রে সফলতার দৃষ্টি মেলে, এটাই প্রেমের বিয়ে। বিয়ের মধ্যে যদি উত্তম মধ্যম থাকে, তবে প্রেমের বিয়েই উত্তম মনে হয়।
শিরোনামে দিয়েছেন ‘ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী’, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীই বটে! তবে রুমানা মনজুরের স্বামী সাইদের মানসিকতার সাথে আপনার মানসিকতা অনেকাংশে মিলে যায়। সাইদ বিকৃত মানসিকতার, সেই অর্থে আপনাকেও বিকৃত মানসিকতার একজন হিসেবে ধরে নিলাম। দুঃখিত, আপনার এই লেখা পড়ে এর চাইতে ভাল কিছু মাথায় আসলো না।
লেখাটা শুরু করেছেন ম্যাডামের পক্ষ নিয়ে, শুরুতে মনে হলো আপনি ম্যাডামের দুঃখে কাতর, অপরাধীর শাস্তিও চেয়েছেন, কিন্তু আস্তে আস্তে পরের দিকে নিজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা আর ঢেকে রাখতে পারেন নি।
দ্বিতীয় প্যারায় বলেছেন, ‘আমি নারীর পক্ষে এবং পুরুষেরও পক্ষে’। এই ঘটনায় কোন পক্ষ আসবে কেন!!! আপনি সুস্হ মানুষ হলে বলতেন ‘আমি সকল অন্যায়ের বিপক্ষে’।
তৃতীয় প্যারা থেকে আপনার আসল মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে। এমনও হতে পারে এটা আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার প্রতিফলন, যদি তাই হয় তাহলে আমি শঙ্কিত আপনার স্ত্রী’র ক্ষেত্রেও রুমানার মতো এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে। দুঃখিত এই কথা বলার জন্য। বিয়ের পর পুরুষ নেরি কুত্তা হয় না বরং উল্টোটা হয়। নিজের ঘটনা দিয়ে পুরো সমাজ বিচার করতে আসবেন না প্লিজ।
ঝগড়া বিবাদ খুবই স্বাভাবিক ঘটনা একটা পরিবারে, তার মানে এই না যে চোখ উপড়ে ফেলা বা হত্যা করা। যারা এসব করে তারা বিকৃত মানসিকতার। আপনে আপনার লেখায় ম্যাডামের জন্য মায়াকান্না দেখিয়েছেন, কিন্তু যেকেউ আপনার লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়লে আপনার লেখার অন্তরালে সাইদের মতো মানুষদের জন্য যে ভালবাসা ফুটে উঠেছে তা চোখে পড়বে।
কারেন্ট চলে গেছে, আলোচনা পরে হবে, আজ এ পর্যন্তই।