গা শিউরে উঠেছে, এ কি কান্ড! সব আতঙ্ক একবারে এসে গ্রাস করছে আমাকে। এ কি সভ্যদশা! আজ দেখছি কেউ নিরাপদ নয় – রাখালী থেকে স্কুল ছাত্রী পর্যন্ত। কত বড় স্কুল, কত কত সুনাম, সেই স্কুলের কিছু শিক্ষক জানোয়ার, এটা আগে জানা ছিল না, প্রত্রিকাতে জানলাম। জানোয়ার বলা ভুল হলো। জানোয়ারের সম্মানের হানি হলো। এরা জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ঠ।
ইভ টিজ শব্দটি আলোড়ল তুলেছিল বেশ কিছুদিন আগে। এটা আমাদের দেশ ও আশেপাশের দু’একটি দেশে যৌন নির্যাতনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটা সীমিত পর্যায়ের ধর্ষণ, কিন্তু আজ সুনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানে যা হলো তাকে কি বলা হবে? তা কি কেবল ঐ নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কলুষিত করে? অন্য শিক্ষককে নয়? প্রতিষ্ঠান বা জাতিকে নয়?
এত বড় একটি ঘটনার শাস্তি হলো চুড়ান্ত বরখাস্ত! অন্য তেমন কিছু নয়, কেন? আমরা জাতি হিসেবে কি এতই নিচু? এ দেশ ছাত্রীদের, সন্তানদের, সাধারন স্বাভাবিক মানুষদের এখনও বাসযোগ্য নয়। এ ডিজিটাল শতাব্দীতে এসেও এটা কাম্য নয়।
তদন্ত কমিটি অনন্ত তদন্ত প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়, আমরাও সাময়িক উত্তেজিত হই কোন অঘটন ঘটলে। পুলিশ উদ্ধর্তন কোন কতৃপক্ষের চাপ না পাওয়া পর্যন্ত আসামী তাদের ধরাছোঁয়ার বাহিরে বলে বক্তব্য হাকে। কোন অঘটন ঘটলেই তা রাজনৈতিক পর্যায়ে নিয়ে কাঁদা ছোড়াছুড়ি হয় সতিনের মতো। আমরা সবকিছু দ্রুত ভুলে যাই, সুখ কিংবা দুঃখ। অবাক জাতি। মন্ত্রী মন্ত্রীত্ব রক্ষার্থে চামবাজের মতো কথা বলে, সুশীল সমাজ চরম জ্ঞানীর মতো মাথা নাড়ে, আর মোটা চশমার ফ্রেমটা নাড়ায়। পোষা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে, চোর কিংবা অশুভ স্পর্শে, আর আমরা অশুভ দেখলেই সহযোগীতা করি, এটা লজ্জ্বার।
দোষীরা শাস্তি দেখে না, শাস্তি পায় ফেলানীরা, বিচার পাবে না লেমন, মামলা দেখে কামলারা। আমাদের শরীর রোগে ভর্তি। অশ্ব-ভগন্দর রোগীর মতো নিমিষেই এনার্জি হারিয়ে ফেলি, অবাক লাগে, আমরা বোধহয় মানুষ নই, মানুষগুলো অন্য রকম। মানুষ হলে এই শিক্ষকের ফাঁসি হতো। গুরু অপরাধের লঘু শাস্তি, বলাৎকার দেখে চমৎকার বলবেন না প্লিজ।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও মাননীয় এমপি রাশেদ খান মেনন সাহেবদের সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বিচার এত সামান্য হওয়ার কথা নয়। এত বড় ঘটনার গুরুত্ব যে দেয় নি সেই লুৎফর রহমান কত বড় শয়তান কত বড় শয়তান এটা বোঝা বাকি থাকে না। তারও তেমন কিছু হয়নি। এদেশে রাজা যা বোঝে রাখালও তা বোঝে, রাজা ভাবে রাখাল বোঝে না, তাই সে মুচকি হাসে। কিন্তু রাখাল মনের ক্ষোভে যন্ত্রনায় অঝোরে কাঁদে, সে কান্না দেবতাও শোনে না। দেবতা রাজার পক্ষে। কেঁদে কেঁদে লাভ নাই, কাঠামো ভাঙ্গতে হবে, চাই প্রতিবাদ, চাই একাত্বতা, চাই বর্বরতার ধ্বংস, চাই শান্তি। এত বড় প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেনীর ছাত্রীটির বিচার যদি হয় এত নড়বড়ে তাহলে তো অন্যরা আরো অসহায়। মুখে আমাদের আদর্শের অবস্হান অত্যন্ত কঠোর, কিন্তু বাস্তবায়নে নন ঠনা ঠন।
ছোট থেকে মূল্যবোধ শিখছি। শিখে শিখে বড় হচ্ছি। পিতা শিখিয়েছে, আমার পরেই তোমার শিক্ষক। স্কুল শিখিয়েছে, শিক্ষক আদর্শ। আজ শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থী অনিরাপদ। রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন তা হয় ভয়ঙ্কর আর ভয়াবহ।
কাম বৃত্তি মহাসুখের, কিন্তু যিম্মি করে বলাৎকার সমাজ স্বীকৃত নয়। ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলের বাংলার পরিমল নামের এই জানোয়ারের ফাঁসি হওয়া দরকার আর এ ঘটনা যারা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় আছে তাদেরও। নইলে সমাজের অধিকাংশ কাঠামো দখল করে নেবে এরা। তখন আর কিছুই করার থাকবে না। বিশৃংখলা আর অজাচার মিলে মিশে হবে একাকার, যেটা দেশের জন্য শুভ হবে না। খুব দ্রুত এ ঘটনার ন্যয় সঙ্গত বিচার দাবী করছি।
ইতর পরিমল জয়ধর গ্রেফতার হয়েছে। শুয়োরটার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। ঘটনাটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করায় ভিকরুন্নেসা নূনের অধ্যক্ষ হোসনে আরা আর লুৎফর রহমানেরও শাস্তি হোক।
যৌন নির্যাতন করার পর হারামিটা সেগুলোর ছবি তুলে রাখত আর ব্লাকমেইলিং করে নিয়মিত ধর্ষণ করতো। মেয়েটি এক পর্যায়ে গর্ভবতী হয়ে পড়লে তার বাবা মা গর্ভপাত ঘটায়। এই নরপশুগুলোর হাত থেকে সমাজকে উদ্ধার করতে হলে এ ধরনের প্রতিটি ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলতে হবে সবাই মিলে, শাস্তি দিতে হবে তাহলে নারী নির্যাতনের হার কমবে আস্তে ধীরে।