ভুলেই গিয়েছিলাম হঠাৎ আবার মনে হলো, একটু অন্যরকম করে মনে হলো; এর আগে এইভাবে মনে হয়নি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ইয়াবা শব্দের সাথে পরিচিত হয়েছি, আর ফেন্সিডিল ওরফে ছয় ইঞ্চি ওরফে ডাল এর নাম শুনেছি জন্মের পর পরই আর পর্ণ পিকচার এর সাথে টিন বয়সে আর নগ্ন দৃশ্যের রমরমা সিডি ডিভিডি দেখছি আজকের দিনে। দিন খুব বেশি গড়াইনি কিন্তু প্রকাশের মাত্রা তীব্র।
একটা সময় মুঠোফোন ছিল না, চিঠি লিখে লিখে আবেগ- অনুভূতির বিনিময় হতো, বেশ সময় সাপেক্ষ ছিল, অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকতে হয়েছে পোস্ট অফিসের রানারের বোঝা হাতে লাল বাক্সের দিকে, ইলেকট্রিকের যুগ রানারকে দিয়েছে ছুটি; এখন নিমিষেই পৌছে যায় অনেক কিছু এক পাশ থেকে অন্য পাশে। ধীরে ধীরে মুঠোফোনে যুক্ত হলো – ক্যামেরা, ভিডিও, রেকর্ডার, বিবর্ধিত হার্ডডিক্স, গান দেখা ও শোনার ব্যবস্হা, এস এম এস, ইন্টারনেট, রেডিও, টিভি সবই যেন ম্যাকলুহানের বিশ্বগ্রামের আদলে বিশ্ব এখন মুঠোর ভেতর। পরিবর্তনে এলো গতি, হলো বহুমুখী পরিবর্তন।
এসেছে নতুন টিভি, নতুন মনিটর, এল সি ডি থেকে এল ই ডি, মস্ত বড় বড় স্ক্রিন, সাউন্ড সিস্টেমে এসেছে পরিবর্তন…..কিতনা সুর, কিতনা গানা, কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দও আজ অপরূপ, কাক কোকিল বনে যায় নিমিষে, এসেছে স্যাটেলাইট, ডিশ এন্টেনা, লুকিয়ে লুকিয়ে টিনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে নাক মুখে কাপড় বেধেঁ অর্ধউলঙ্গ পুতুল নাচ দেখা নয়, এখন এক সুইচেই সবই দেখা যায় ঘরের ভেতর, কত্ত আরাম। ভিসিপির জায়গা দখল করে নিল ডিভিডি, আর কলের গান – সেতো আমি দেখেছি যাদুঘরে।
বরফযুক্ত লেবুজল আর হালকা চিনি বা খেজুরের গুড়, ঈসোপের গুল, তোকমাদানা, বেলের শরবত, মাঠা কিংবা খেজুরের রস এর চেয়ে প্রিয় তারি, চোয়ানি, মহুয়া কিংবা এ্যালকোহল, তার চেয়েও বেশী প্রিয় কফ সিরাপ! যেন তেন কফ সিরাপ নয়, নির্দিষ্ট বোতলে নির্দিষ্ট কোম্পানির সিলসহ কাশের সিরাপ….. এখন অল্পতেই কফ হচ্ছে যুবকদের, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোথায় নিয়ে দাঁড়িয়েছে! এতই কফ আর এতই সিরাপ লাগে যা উৎপাদন ও সরবরাহের চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি … কুকুরেরও এখন কফ হচ্ছে – পদ্মার পাড়ে বসে থাকে দু এক ফোঁটা সিরাপের নেশায়, এত চাহিদা হলে দামতো একটু চড়া হবেই আর জিনিষ যেটা ভালো দামটাতো তার একটু বেশি হবেই এটাইতো স্বাভাবিক, তাই না?
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন হচ্ছে, না নিমন্ত্রিত হচ্ছে তাই যেন কেউ জানে না! এমনিতেই আবহাওয়াগত কারনে শরীরে দ্রুত উত্তেজনা আসে, শুনেছি এখন নাকি মোবাইল ফোনে কথা বলেও গর্ভধারন হচ্ছে, জানিনা বাস্তব কিনা! কিন্তু এত উত্তেজনার শরীরে আরও উত্তেজনার ট্যাবলেট ইয়াবা কতটা প্রয়োজন তা ভাবা দরকার। এত উত্তেজনা তো স্বাভাবিক সাম্যতা বিনষ্ট করবে, নাকি কাশের সিরাপের প্রভাবকে কাটিয়ে তুলতে নতুন এ আবিষ্কার। মনে হয় বিষে বিষে বিষক্ষয় আর ভারসাম্য জীবন, তাই কি?
যৌন জীবনের পরিবর্তনও কম নয় – সামনে যাবার কথা বলে ঐতিহ্যকে ন্যাংটো করে যারা বিনষ্ট করছে মূল্যবোধ – তারাই আজ সাধু বড়, তারাই করে রাজভোগ, ইউটিউব কিংবা গুগল যেখানেই খোঁজ তুমি সেখানেই পাবে পরিবর্তনের ভয়ংকর চিত্র। উপরিউক্ত বিষয়ের সংমিশ্রনে দেশ যাচ্ছে অবাধ যৌনাচারের দিকে, হোমো কিংবা গে, গ্রুপ কিংবা ভারবাল সবই হচ্ছে এলোমেলো, সবই যাচ্ছে বেড়ে, ক্রেতাদের দলও হচ্ছে ভারী, অচিরেই তারা ৩য় লিঙ্গের অধিকার চাইবে কিংবা নিরবে চাচ্ছে। চর্বন, চোষন,লেহন বাড়ছে, আবার এগুলো ছাড়া যে যৌনরোগ হচ্ছে না!
জামার দৈর্ঘ্য কমতে কমতে অনেক উপরে উঠেছে, কমোরে কাটা ‘ভি’ চিহ্ন দিয়ে মেলানো যাচ্ছে ভেতর আর বাহিরের রং। আমরা বান্ধবিকে নগ্ন দেখতে চাই, বউকে নয়, কি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, কি আমাদের চাওয়া! অধিক উত্তেজনাকর কোন কিছু যখন খাওয়া হচ্ছে তখন যাতা করতেই ইচ্ছা হয়, মনে হয় যাতা-ই সত্য অন্য সবই ভেলকি। এই মূল্যবোধের সাথে যুক্ত হচ্ছে পাশ্চাত্য দৃষ্টি আর দেহীয় মডেলের স্বাভাবিক যৌনপ্রকাশ যা যৌবনপ্রাপ্ত প্রায় সকলেরই ইচ্ছাকে আকর্ষণীয় করেছে বহুগুন আর মূল্যবোধেও এনেছে পরিবর্তন … এমনকি একদিন আমরা বলবো বহুগামীতাই সঠিক আর বিপরীতটাকে বলবো রোগ। নগ্নতা যৌনতা নয় সত্য কিন্তু নগ্নতাতো যৌনতা সৃষ্টি সহায়ক, নাকি? এমনি করেই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে ঐতিহ্য হয় বলি, হয় অন্যরকম আগ্রাসন, এভাবেই নির্দিষ্ট কিকমুখিতা প্রচন্ড টান তৈরি করে.. তখন উন্নত দেশকে মনে হয় ঈশ্বর আর আমরা প্রজা। ব্যবসাটা জমে ওঠে তখনই…………
ফেনসিডিলের মূল্যবৃদ্ধি করে ইয়াবার অবাধ প্রসার আর এর অল্পমূল্য সেবনকারীদের কাছে আকর্ষনীয় নতুনত্ব আর মূল্যসাশ্রয়ী হিসাবে গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে বেশী বই কম নয়। তারপর এই উত্তেজক দ্রব্য শরীরে আনছে পরিবর্তন, মনেও আনছে অস্হিরতা, তার ফলেই সে খুলছে তার জামাকাপড়। এটা ব্যবসায়ীদের পূর্ব পরিকল্পানা। আর যদি মডেল দিয়ে মূল্যবোধ পরিবর্তন করা যায় তাহলে তো ভাইটামিনের মতো কাজে দিবে। তখন সে তার জামা কাপড় খুলে দিগ্বিদিক ছুড়ে ফেলতেও দ্বিধা করবে না, যা ইচ্ছা তা করতেও তার সমস্যা হবে না, পাল্টে যাবে ইসলামী মূল্যবোধ, পুরোপুরি সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক আগ্রাসন হবে কায়েম। এর প্রতিষেধকও তৈরি করবে তারা আবার তা উচ্চমূল্যে বাজারজাত হবে………… এটাইতো ব্যবসায়িক নীতি!
একটা সময়ে মানুষ তখন ব্যবসায়ীদের কাছে অসহায় ছিল। তারাই ইচ্ছা মত বাজার নিয়ন্ত্রন করতো, মানুষ শোষণ করতো ইচ্ছামত। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সাম্রাজ্য দখল করে ব্যবসা সম্প্রসারিত করতো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এমনি করে এই উপমহাদেশও শাসন করে গেছে। এরপর আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীদের তোর জোর কমতে থাকে, ব্যবসায়ীরাই বরং মানুষের চাহিদা, পছন্দ অপছন্দের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
কিন্তু বর্তমানে এই বিশ্বায়নের যুগে মনে হয় আবার আগের সেই রীতি ফিরে আসতেছে। তবে এখন অত্যন্ত সুক্ষ্ণ পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজগুলি করা হচ্ছে, সাধারন মানুষের চোখের আড়ালে। ভাষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, চাহিদা এখন তাদের পছন্দমত বা তাদের সুবিধামত ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে নিচ্ছে। তাদের অংশগ্রহন ছাড়া এখন আর কোন অনুষ্ঠান হয় না, কোন পত্রিকা চলে না, মিডিয়াগুলো অচল। সবকিছুতেই তাদের প্রভাব।
চমৎকার লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাল লাগছে লেখাটা, আপনার সাথে একমত। মাদকদ্রব্য প্রসারে ব্যবসায়ীরা দায়ী আর ব্যবসায়ীরা ছাড়া আমরাও মূলত অচল হয়ে পড়েছি।