একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন

“একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন”, এই শ্লোগানকে সামনে রেখে এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলে বাঁধন নামক এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের এই সংগঠনটি মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের হাতেই বেড়ে উঠেছে এবং উঠছে। অসম্ভব প্রাণশক্তি নিয়ে মুমূর্ষের জন্য রক্তের প্রয়োজনে নিরলস খেটে যাচ্ছে এর শত শত কর্মী দেশের প্রধান শিক্ষাঙ্গনগুলোতে।

badhon, a blood donation organization

যেভাবে বাঁধনের যাত্রা শুরু:

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটির অবস্থান ঠিক যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকের মধ্যে। এ হাসপাতালটির আশপাশে রয়েছে এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি হলের অবস্থান। শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও বারডেমের অবস্থানও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন। সংগত কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী পরিচিত-অপরিচিত অনেক রোগীর জন্য প্রায়ই স্বেচ্ছায় রক্তদান করত। এই রক্তদান হতো বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বা শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে। নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর্দের স্বেচ্ছায় রক্তদানের কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল না। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই তখন নিজেদের রক্তের গ্রুপ জানত না বা জানার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ বোধ করত না। এ রকম পরিস্থিতিতে ১৯৯৭ সালের জুন-জুলাই মাসের দিকে শহীদুল্লাহ হলের ছাত্র শাহিদুল ইসলাম রিপনসহ কিছু উদ্যমী তরুণ স্বেচ্ছায় রক্তদানের একটি সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। সংগঠনটির নাম ঠিক হয় ‘বাঁধন’। ২৪ অক্টোবর ১৯৯৭ বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করার মধ্য দিয়ে বাঁধনের যাত্রা শুরু। সেই থেকে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাঁধন নামক সংগঠনটির ছায়াতলে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেউ রক্ত দিয়ে, কেউ রক্তদাতার সন্ধান দিয়ে বাঁচিয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ মুমূর্র্ষুর জীবন।
‘বাঁধন’ শুরু পর থেকে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি। দেশব্যাপী ঘটেছে এই সংগঠনের বিস্তৃতি। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জাহিদ হাসনাইন বলেন, সারাদেশে বাঁধনের কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্যে ৫টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এই পাঁচটি জোনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রায় ১০০ ইউনিট। এছাড়া রয়েছে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোয় স্বতন্ত্র ইউনিট। বাঁধনের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে স্বেচ্ছায় রক্তদানের সচেতনতা বৃদ্ধি করা, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা, স্বল্পমূল্যে হেপাটাইটিস-এ হেপাটাইটিস-বি, টাইফয়েড, টিটেনাস ইত্যাদির টিকাদান কর্মসূচি, কর্মশালা আয়োজন, টেকনিশিয়ান ট্রেনিং এবং বিশেষ জাতীয় দিবস উদযাপন।

রক্তদান ছাড়াও ‘বাঁধন’ দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণের কাজও করে থাকে। বাঁধনের আর্থিক জোগান সম্পর্কে বাঁধন সভাপতি বলেন, বাঁধনকর্মীদের চাঁদা, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্র্তৃপক্ষের অনুদান এবং সমাজের নানা ব্যক্তির অনুদান দিয়ে বাঁধনের কার্যাবলি পরিচালিত হয়।
শুধু রক্তদাতা সংগ্রহ ও রক্তদানের উৎসাহিত করা নয়, স্বেচ্ছায় রক্তদানের জন্য বাঁধনের রয়েছে স্বতন্ত্র রক্ত সঞ্চালন ইউনিট; যেখানে রক্ত সংগ্রহ করে মুমূর্ষু’র জন্যে রক্ত প্রেরণ করা হয়।

গত এক বছরে বাঁধন প্রায় ৫০ হাজার ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করেছে। এ পর্যন্ত বাঁধন ১.৯৩ লাখেরও বেশি ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করেছে। বাঁধন এ পর্যন্ত প্রায় ৬.৭ লাখ মানুষের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করিয়েছে। বাঁধনের কর্মকাণ্ডের ফলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ডে এখন রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রক্তদানের মাধ্যমে বাঁধনের সদস্য হতে পারে। বাঁধনের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে পারে যে কোনো মুমূর্ষু রোগী।

এক নজরে বাঁধন
প্রতিষ্ঠাকাল: ২৪ অক্টোবর, ১৯৯৭
রেজিঃ নং: ঢ-০৬১৫২
মূলমন্ত্র: একের রক্ত অন্যের জীবন
রক্তই হোক আত্মার বাঁধন
ক্ষেত্র: বিশ্ববিদ্যালয় ও স্নাতকোত্তর কলেজ সমূহ।
বৈশিষ্ট্য: ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা পরিচালিত একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

বাঁধন এর উদ্দেশ্য:
* স্বেচ্ছায় রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলা।
* বাংলাদেশের মোট রক্তের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা।
* দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্নাতকোত্তর কলেজ বাঁধন এর কার্যক্রম সম্প্রসারন করা।

স্বপ্ন দেখি সেদিনের, যেদিন…..
* বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তার নিজ রক্তের গ্রুপ জানবে এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসবে।
* রক্তস্নাত এই বাংলায় রক্তের অভাবে আর একটি জীবন প্রদীপও যেন নিভে না যায়।

বাঁধন এর কার্যক্রম:
* নিজে রক্ত দেয়া ও অন্যকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণ।
* বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা।
* মুমূর্ষুর প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহের ব্যবস্থা করা।
* স্বেচ্ছায় রক্তদানে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ মূলক অনুষ্ঠান।
* স্বল্পমূল্যে (হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি, টাইফয়েড, টিটেনাস ইত্যাদি) টিকাদান কর্মসূচী।
* জাতীয় দূর্যোগ মূহুর্তে (বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, মঙ্গা ইত্যাদি) বিপন্ন মানবতার সেবায় কাজ করা।

আর্থিক যোগান:
* বাঁধন কর্মীদের চাঁদা।
* সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের আর্থিক সহায়তা।
* উপদেষ্টাদের মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুদান।

সদস্য স্তর:
* রক্তদাতা
* সাধারণ সদস্য
* কার্যকরী সদস্য
* সম্মানিত সদস্য
* বিশেষ সদস্য
* উপদেষ্টা মন্ডলী

সংগঠনের স্তর:
কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ
জোনাল কার্যকরী পরিষদ
ইউনিট কার্যকরী পরিষদ

বাঁধন এর বিস্তৃতি:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জোন-এ ১৬টি ইউনিট
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় জোন-এ ৭টি ইউনিট
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জোন-এ ১২টি ইউনিট
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জোন-এ ১১টি ইউনিট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জোন-এ ১৫টি ইউনিট। এছাড়াও দেশের মোট ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯টি কলেজে মোট ৭৫টি ইউনিট নিয়ে সারা দেশে বাঁধন তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ঠিকানা:
বাঁধন কেন্দ্রীয় পরিষদ
টি.এস.সি.(নীচতলা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
ফোন – ০২-৮৬২৯০৪২ (সন্ধ্যা থেকে রাত ৯.৩০ টা পর্যন্ত)

বুয়েট: ফোন – ০১৯১২০৮২৯১৯

জা.বি –  ফোন – ০১৭১২১৮০২৪৬

Leave a Comment