এস এম সুলতান পরিচিতি ও কিছু চিত্রকর্ম

বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জন্ম ১৯২৩ সালের ১০ই আগস্ট বাংলাদেশের নড়াইল জেলার মাছিমদিয়া নামক স্হানে। মারা যান ১৯৯৪ সালের ১০ই অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে, তখন তাঁর বয়স ৭১ বছর। পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। অনেকে লাল মিয়া বলে ডাকতেন। তিনি সুন্দর বাঁশি বাজাতে পারতেন।

sm sultan picture

কলকাতার আর্ট স্কুল থেকে পড়াশুনা শেষ করার পর একজন ফ্রিল্যান্স চিত্রশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ছিলেন ছন্নছাড়া প্রকৃতির। এক জায়গায় বেশিদিন থাকতেন না। উপমহাদেশের বিভিন্ন শহরের পথে পথে ঘুরে বেরাতেন ও ছবি আঁকতেন। এসব ছবির বেশিরভাগই আর পরে খুঁজে পাওয়া যায় নি।

তিনি বলেন, “একেক জায়গায় এভাবে পড়ে আছে সব। শ্রীনগরে গেলাম। সেখানকার কাজও নেই। শ্রীনগরে থাকাকালীন পাকিস্তান হয়ে গেলো। ৪৮ এ সেখান থেকে ফিরে এলাম। কোনো জিনিসই তো সেখান থেকে আনতে পারিনি। একটা কনভয় এনে বর্ডারে ছেড়ে দিয়ে গেলো। পাকিস্তান বর্ডারে। আমার সমস্ত কাজগুলোই সেখানে রয়ে গেলো। দেশে দেশে ঘুরেছি। সেখানে এঁকেছি। আর সেখানেই রেখে চলে এসেছি।”

তাঁর জীবনের মূল সুর-ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজের মধ্যে। আবহমান বাংলার সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তাঁর শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। তাঁর ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণীর দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হালও অনেকটা ফুটে উঠেছে। তাঁর ছবিগুলোতে বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে।

গ্রামীণ জীবনের প্রতি ছিল তাঁর চিরন্তন আকর্ষণ এবং সহমর্মিতা। এ কারনে চিত্রগুলোতে গ্রামীণ কৃষকদের দেখা যায় পেশীবহুল এবং বলশালী হিসেবে। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য,

“আমাদের দেশের মানুষ তো অনেক রুগ্ন, কৃষকায়। একেবারে কৃষক যে সেও খুব রোগা, তার গরু দুটো, বলদ দুটো -সেটাও রোগা…। [আমার ছবিতে তাদের বলিষ্ঠ হওয়াটা] মনের ব্যাপার। মন থেকে ওদের যেমনভাবে আমি ভালোবাসি যে আমাদের দেশের কৃষক সম্প্রদায়ইতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য গড়েছিলো। অর্থবিত্ত ওরাই তো যোগান দেয়। …আর এই যত জমিদার রাজা মজারাজা আমাদের দেশের কম কেউ না। সবাই তো কৃষিনির্ভর একই জাতির ছেলে। আমার অতিকায় ছবিগুলোর কৃষকের অতিকায় অতিকায় দেহটা এই প্রশ্নই জাগায় যে, ওরা কৃশ কেন? ওরা রু্গ্ন কেন- যারা আমাদের অন্ন যোগায়। ফসল ফলায়।”

sm sultan photo

এস এম সুলতানের একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীগুলো:

১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলা, ১৯৪৮ সালে পাকিস্হানের লাহোর, ১৯৪৯ সালে পাকিস্হানের করাচী, ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন, শিকাগো ও নিউইয়োর্ক, ১৯৭৬ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে, ১৯৮১ সালে জাপানের ফুকুওকা মিউজিয়ামে অনুষ্ঠিত এশিয় চারুকলা প্রদর্শনীতে, ১৯৮৭ সালে ঢাকায় গ্যেটে ইনস্টিটিউট এ, ১৯৯৪ সালে ঢাকায় গ্যালারি টোন এ। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে তাঁর ১৬টি একক প্রদর্শনী হয়েছিল।

পুরষ্কার:

এস এম সুলতান ১৯৮০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড রিগানের কাছ থেকে পান শ্রেষ্টত্বের পুরষ্কার, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশে একুশে পদক পান, ১৯৯৩ সালে তাকে বাংলাদেশ সরকার কতৃক স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কার প্রদান করা হয়।

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া বাংলা।

এস এম সুলতানের আঁকা কিছু পেইন্টিং-

Paintings and arts by S M Sultan :

paintings of S M Sultan

S M Sultan painting

paintings of S M Sultan

এস এম সুলতান পেইন্টিং

art of sm sultan

paintings of sm sultan

paintings S M Sultan

2 thoughts on “এস এম সুলতান পরিচিতি ও কিছু চিত্রকর্ম”

  1. এস এম সুলতানের নাম শুনলে জেমসের একটা গানের কথা মনে পড়ে যায়। এত দিন শুধু শুনছি এস এম সুলতান এক মহান শিল্পী, তার সম্বন্ধে বেশি কিছু জানতাম না। ধন্যবাদ তার জীবনী শেয়ার করা জন্য।

  2. আমার কাছেও এস এম সুলতানের বেশ কিছু চিত্রের কালেকশন আছে, আপনার পোস্ট নতুন আরও কিছু পেলাম। ধন্যবাদ।

Leave a Comment