নরপিশাচ হাসান সাইদ অবশেষে গ্রেফতার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুমানা মনজুরের স্বামী নরপশু হাসান সাইদ অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন। আজ দুপুরে মুগদার একটি বাসা থেকে এই নরকের কীটকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়ার পর পিশাচটা জানিয়েছেন, ধস্তাধস্তিতে নাকি তার স্ত্রী আহত হয়েছেন, হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

 

Hasan Syed Sumon after arrest
গ্রেফতার হওয়ার পর নরপিশাচ হাসান সাইদ সুমন

১০ বছর আগে হাসান সাইদ ও রুমানা মনজুরের বিয়ে হয়। হাসান বুয়েট থেকে পাশ করা একজন ইঞ্জিনিয়ার, অবশ্য তার সহপাঠীদের অনেকের ধারণা হাসান বুয়েট থেকে শেষ পর্যন্ত পাশ করেন নি। বাবা মা আমেরিকায় থাকেন। বিয়ের পর থেকেই এই পশু শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন ঘরজামাই হিসেবে। কাজ কর্ম কিছু করতেন না। একবার অটোরিক্সার ব্যবসায় নেমে ধরা খান, পরে শেয়ার ব্যবসায় নামেন, সেখানেও ভাল কিছু করতে পারেন নি। বসে বসে শ্বশুর আর স্ত্রীর অন্ন ধ্বংস করা ছাড়া তার আর কোন কাজ ছিল না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা মনজুর স্কলারশীপ পেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডা যান গত বছর। রুমানার উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া পছন্দ ছিল না নরপিশাচ হাসানের, তিনি বিভিন্নভাবে বাধা প্রদানও করেছেন। তাদের পাঁচ বছরের একটি মেয়েও আছে, নাম আনুশা। গতমাসে রুমানা দেশে আসেন বাচ্চাকে দেখতে।

 

মেয়ে আনুশার সাথে রুমানা মনজুর

৫ই জুনের ঘটনা, ঘরে ছিলেন রুমানা মনজুর আর তার মেয়ে আনুশা। এই নরকের কীট হাসান সাইদ রুমে আসেন এবং স্ত্রী’র সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া শুরু করেন। পাঁচ বছরের মেয়েটির সামনে জানোয়ার হাসান তার স্ত্রী’র নাক কামড়ে ছিঁড়ে ফেলেন এবং রুমানার চোখদুটো উপড়ে ফেলার চেষ্টা করতে থাকেন, হিংস্র পশুর মতো শরীরের বিভিন্ন অংশে কামড়াইতে থাকেন। বাচ্চা মেয়েটি ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। বাড়ির কাজের মেয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে, হাসান দরজা খোলেনি। রক্তাক্ত রুমানা অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে ছিল। বিকল্প চাবি থাকায় কাজের মেয়েটি দরজার লক খুলে ভিতরে ঢোকে, এ সময় হাসান ঘর থেকে বেড় হয়ে পালিয়ে যায়। রুমানা ম্যাডামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তাঁর বাম চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, ডান চোখের অবস্হা আশংকাজনক। গতকাল মঙ্গলবার তাকে ইন্ডিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় উন্নত চিকিৎকার জন্য।

রুমানার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। তিনি ঘটনার পরদিন ধানমন্ডি থানায় তাঁর মেয়েকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। পুলিশ এ কয়দিন শুয়োরটাকে গ্রেফতার করেনি, ঘটনা কোথাও প্রকাশও পায়নি। মানবজমিন প্রথম ১৩ তারিখে এ খবরটি প্রকাশ করে, পরদিন অন্যান্য মিডিয়ায় ঘটনাটি তুলে ধরা হয়। এরপরও হাসান গ্রেফতার হয়নি। বরং সে বাহিরে থেকে রুমানার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছিল যাতে মামলা তুলে নেওয়া হয়। ১৪ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে এবং তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি জানায়। আজ ঢাবির শিক্ষকরা এক সমাবেশে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এ নপুংশকের গ্রেফতার দাবী করেন। হাইকোর্ট হাসানকে কেন এখনও গ্রেফতার করা হলো না, এ মর্মে একটি রুল জারি করে আজ। তারপর পুলিশ আজ দুপুর দুইটার দিকে মুগদার একটি বাসা থেকে হাসান সাইদ সুমনকে গ্রেফতার করে। সামহয়্যার ইন ব্লগে একজন লিখেছেন, বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রীর নাকি আত্মীয় এই হাসান। এই জন্যই হয়তো তাকে গ্রেফতার করতে টালবাহানা করছিল পুলিশ প্রশাসন!

ঘটনাটা জানার পর থেকে শরীরের মধ্যে ঘৃণায় রিরি করছিল। একটা মানুষ কেমনে পারে তার স্ত্রী’র উপর এমন নির্যাতন চালাতে! তাও আবার সভ্য শিক্ষিত মানুষ! নপুংশকটা দীর্ঘদিন ধরেই নানাভাবে রুমানা ম্যাডামকে অত্যাচার করে আসছিল। সন্তান আর সমাজের কথা চিন্তা করে রুমানা ও তাঁর পরিবার কোন ব্যবস্হা নেয়নি এতদিন, ভাবতো ঠিক হয়ে যাবে একদিন। আগে চলতো মানসিকভাবে আঘাত, তারপর শীরিরিক নির্যাতন, আর এখন হত্যার চেষ্টা। প্রতিবেশি ও আত্মীয় স্বজনরা অনেকেই নাকি আগে থেকেই জানতো যে হাসান তার স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালায়।

httpv://www.youtube.com/watch?v=ZWsWJsT0HqU

সভ্য সমাজে এমন ভয়ংকর নরপশু হাসান একা না, এমন পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা সমাজে ঘটে প্রতিনিয়তই। বেশিরভাগই প্রকাশ পায় না, কোন বিচার হয় না। এ পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্হায় ক্ষমতা, টাকা, নোংরা রাজনীতি ব্যবহার করে নপুংশকরা সদর্পে টিকে থাকে এ দেশে। জানোয়ার হাসান সাইদ সুমনও হয়তো গ্রেফতার হতো না, তার রাজনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করে টিকে থাকতো বা ভবিষ্যতে হয়তো বিচার হবে না। এখন পর্যন্ত যতটুকু হয়েছে মিডিয়ার জোরে।

আমাদের সকলেরই উচিত এমন নরপিশাচদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, প্রশাসনের উচিত এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া। মানুষ হয়ে মানুষের উপর এমন নির্যাতনে চুপ থাকলে, বিচার না হলে, এদের প্রশ্রয় দিলে পশুগুলো আরও হিংস্র হয়ে উঠবে। আমাদের সকলেরই উচিত মানব সমাজ থেকে পশুগুলোকে বিতারিত করতে সাহায্য করা এবং যেকেই এমন পারিবারিক নির্যাতনের চেষ্টা চালালে তাকে সবাই মিলে সমাজ থেকে ছুঁড়ে ফেলা।

Leave a Comment