হেনা হত্যাকান্ড!ইসলাম থেকে আসুন আমরা মানবিকতার শিক্ষা নেই!

অনেকেই হয়তো ঘটনাটা পত্রিকা মারফত জেনেছেন। সংক্ষেপে বলি, শরীয়তপুরের নাড়িয়া উপজেলার চামটা গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারের ১৪ বছরের কিশোরী মেয়ে হেনা। প্রকৃতির ডাকে রাতে ঘর থেকে বেরিয়েছিল। মাহবুব নামের তার দুর সম্পর্কের চাচাতো ভাই মুখে কাপড় গুজে তার পরিত্যক্ত এক ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে মেয়েটির চিল্লাচিল্লিতে  পরিবারের লোকজন মেয়েটিকে উদ্ধার করে।

ঘটনাটি জানাজানি হলে গ্রামের এক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে এক শালিসের আয়োজন করে। ইমাম আর মাদ্রাসার মাদ্রাসার শিক্ষকের পরামর্শে মেয়েটিকে ১০০ দোররা মারার শাস্তি দেওয়া হয়।

কিশোরী হেনা

গ্রামের মানুষজনের সামনে তাকে দোররা মারা শুরু হয়। ৭০-৮০ টি দোররা মারার পর মেয়েটি অচেতন হয় লুটিয়ে পরে, থানা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হলে সোমবার রাতে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ধর্ম নাকি আমাদের মানবিকতা শেখায়! ইসলাম নাকি মানবিকতার উৎস! তাহলে তো হুজুর আর মাদ্রাসা শিক্ষকদের মানবিকতা সবার চাইতে বেশি থাকার কথা! মেয়েটিকে মারার সময় তাদের মানবিকতা কই ছিল!

আসলে সবক্ষেত্রে মানবিকতা খাটে না, কি বলেন? একজন জেনাকারীর সাথে কোন মানবিকতা নাই, অপর্দান নারীর ক্ষেত্রে কোন মানবিকতা নাই! একজন কাফের অবিশ্বাসীর ক্ষেত্রে কোন মানবিকতা নাই! ইমাম সাহেবদের তো জান্নাতে যেতে হবে! সেখানে ৭০ জন হুরপরী অপেক্ষামান! দুনিয়াতে আল্লার রাস্তা ক্লিয়ার রাখতে হবে না! এর জন্য প্রয়োজনে হত্যা করতে হবে, প্রয়োজনে হাত কাটতে হবে, প্রয়োজনে দোররা মারতে হবে। হুজুরে পাক তো নিজেই এমন নির্দেশ দিয়ে গেছেন। তার হুকুমে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, চুরির অপরাধে হাত কাটা হয়েছে, বেপর্দার অপরাধে দোররা মারা হয়েছে, পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও তিনি ছিলেন মানবিকতার কান্ডারী! ইসলাম সর্বশ্রেষ্ট মানবতার ধর্ম। ইমাম সাহেবরা তো তার পথই অনুসরণ করেন! এটাকেই মানবিকতা বলা হয়। আপনি আমি যে মানবিকতা বলতে যা বুঝি তা ভুল!

এটা একটা হত্যা। আর এই হত্যায় উৎসাহ যুগিয়েছে ধর্ম, বর্বর ইসলাম ধর্ম। একথায় মডারেট মুসলিমরা আপত্তি জানাবেন, ধর্মকে বাঁচানোর চেষ্টায় নামবেন। বলবেন, অশিক্ষা কুশিক্ষার কারনে এমনটি ঘটেছে, ইসলাম কখনই এমন হত্যাকান্ডের অনুমতি দেয় না।

দুঃখিত, অনুগ্রহ পূর্বক ইসলামের পক্ষে সাফাই গাইতে আসবেন না। দোররা মারার প্রচোলন কে শুরু করছে! গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এই ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষকদের মুরুব্বী মানেন কেন! তাদের নেয়া কোন সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রতিবাদ করেন না কিসের ভয়ে! গ্রামের বিচার সালিসে তারা থাকবেন কেন! হুজুর ইমামরা কার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন! কেন নারীদের উপরই নির্যাতনের পরিমাণটা বেশি হয়! জবাব জানেন? জবাব হলো সবকিছুর ভায়া ইসলাম। যেহেতু মুসলমান তাহলে এটা তো স্বীকার করেন যে, কুরআনের আইনই সর্বোচ্চো আইন, আর বাকি সব মিথ্যা!

মেয়েটি মারা গিয়েছে বলে আমরা ঘটনাটা জানি, মারা না গেলে হয়তো কখনই জানতাম না। এ রকম অজস্র ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন বাংলাদেশ সহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে।

মেয়েটি যদি মারাও না যেত, তাহলেও হয়তো ধর্ষিত হওয়ার অপরাধের(!) ঘানি সারাজীবন মেয়েটিকে বয়ে বেড়াতে হতো! হয়তো গ্রামছাড়া হতো, হয়তো তাকে একঘরে করা হতো, হয়তো কোনদিনও মেয়েটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারতো না!

মেয়েটি হয়তো মরেই বেঁচে গেছে, নাহলে হয়তো এই পুরুষতান্ত্রিক ইসলাম ধর্ম তাকে দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার করার সুযোগ পেত।

7 thoughts on “হেনা হত্যাকান্ড!ইসলাম থেকে আসুন আমরা মানবিকতার শিক্ষা নেই!”

  1. Pingback: হেনা হত্যাকান্ড!ইসলাম থেকে আসুন আমরা মানবিকতার শিক্ষা নেই! | স্বপ্নবাজের ব্লগ

  2. হেনা হত্যার ব্যাপারে সরকারের উদ্দোগ প্রশংসনীয়। প্রশাসন, আদালত, মিডিয়া, ওয়েব সবজায়গা থেকে এবার ফতোয়াবাজদের একটা ভাল নাড়া দেওয়া গেছে। আশা করা যায় ফতোয়াবাজ আর শরীয়া আইনের দৌড়াত্ব এবার কমবে।

  3. শরীয়াহ আইনের যারা অপব্য্যাখা করছে তাদের ব্যাপারে কিছু না বলেই ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করতে শুরু করলেন?
    হিটলারের দোষে খ্রিস্টান ধর্ম খারাপ এমন কথা কোথায় পেলেন?
    অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী।

    1. মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ শাহাদত ভাই।
      আপনি কি হেনার কাহিনী পুরোটা জানেন! কি কারনে তাকে দোররা মারার ফতোয়া দেওয়া হলো?
      ইসলাম সম্পর্কে যদি পুরোটা জানেন তাহলে আপনাকে মানতে হবে ইসলাম অনেকটাই পুরুষতান্ত্রিক, পুরুষের সুবিধা সর্বপ্রথম এখানে স্হান পায় তারপর নারীদের, নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে পুরুষদের সেবা করার উদ্দেশ্যে। বাস্তবে মুসলিমরা মানে খাঁটি মুসলিমরা এ সুযোগের সদব্যবহার করে।
      হেনা ধর্ষণের পর বিচারে হেনাকে প্রমাণ করা হয় সে চরিত্রহীনা, ধর্ষক মাহবুবের সাথে আগে থেকেই তার শারীরিক সম্পর্ক ছিল। এমনকি প্রমাণ করার চেষ্টা হয় সে ধর্ষণ হয়ইনি, স্বেচ্ছায় সে রাতে মাহবুবের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। হেনা নাকি মানসিক রোগী ছিল, মাঝে মাঝে এমনি চিল্লাফাল্লা করতো, সেরাতেও অসুস্হতার কারনে সে চিল্লাচিল্লি করে। হেনার বিপক্ষে আর মাহবুবের পক্ষে অনেক সাক্ষী জোগার করা হয়েছিল। অর্থাৎ সে বিচারে হেনাকে চরিত্রহীনা হিসেবে প্রমাণ করা হয়।
      এখন আপনি বলেন শরীয়া আইনে একজন চরিত্রহীনার শাস্তি কি! হুজুর আর মাদ্রাসার শিক্ষক কুরআন হাদিস থেকেই তাকে শাস্তি দিয়েছিল। এখন আপনি যদি শরীয়া আইনের বিরোধিতা করেন তাহলে বুঝতে হবে আপনি পুরোপুরি ইসলাম পালন করেন না বা ইসলাম সম্পর্কে পুরোটা জানেন না। এখনকার মর্ডান মুসলিমরা আল্লা রাসুলকেও ছাড়তে চান না আবার ইসলামের অন্ধকার দিকগুলোও মানতে চান না। কেউ পুরোপুরি মানলে বলেন ঐটা প্রকৃত ইসলাম না!
      ১৪০০ বছর আগের বর্বর আরব জাতির তৈরি করা আইন এই সভ্য যুগে কোন সুস্হ মানুষের পক্ষে পালন করা সম্ভব না। যারা সে আইন পুরোপুরি মেনে চলে অর্থাৎ পুরোপুরি ইসলাম পালন করে, ধরে নিতে হবে তারা কিছুটা মস্তিষ্ক বিকৃত।
      একটা উদাহরণ দেই, শরীয়া আইনে একজন চোরের শাস্তি হলো হাত কেটে নেওয়া। একজন হুজুর যদি শরীয়া আইন অনুযায়ী একটা চোরকে হাত কেটে নেওয়ার শাস্তি দেন এবং ধরলাম হাত কেটে নেওয়ার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে লোকটা মারা গেল। এক্ষেত্রে আপনি কি বলবেন? নিশ্চয় বলবেন না যে এটা প্রকৃত ইসলাম নয়! তাহলে বুঝতে হবে আপনি ইসলাম সম্পর্কে কম জ্ঞান রাখেন।
      এখন আপনার কাছে একটা প্রশ্ন, আপনি কি সুস্হ মস্তিষ্কে চুরি করার অপরাধে কারো হাত কেটে নিতে পারবেন?

  4. আচ্ছা সব মানলাম। আপনি একজন সচেতন মানুষ। আপনার কাছেতো আমরা মানবাধিকারের নিরাপদ আশ্রয় আশা করতে পারি।………….. কিন্তূ আপনি যে ইসলামকে বর্ব্র বললেন তাতে কি ধর্ম মানার স্বাধীনতায় উপর কি কোন প্রভাব পড়বে না????????????????? উত্তর দিলে খুশি হমু………।।

Leave a Comment