হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার। এ অধিকার চর্চায় কতটা অনধিকার চর্চা হচ্ছে তা বিবেচনা করা প্রয়োজন।
পুলিশের পিটুনি খেয়ে একজন জনপ্রতিনিধি জয়নাল হাসপাতালে এটি দু:খজনক ঘটনা। এর দায়-দায়িত্ব পড়েছে মূলত: এসি বিপ্লব সরকারের উপর। জানা গেছে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন হয়েছে। এ দুজনের পূর্ব ইতিহাসের উপর দৃষ্টি না দিলে কোন সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হবে।
বিপ্লব সরকার কে?
বিপ্লব সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী ছাত্র এবং ছাত্রনেতা। ছাত্রলীগ করার কারণে ৯৬ পর্যন্ত এর আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রদের সমাবেশ করতে সে ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। কোন গ্রুপিং – লবিং এ না থাকায় জনপ্রিয়তাই তার মূল ভিত্তি ছিল। সারা বাংলাদেশে ছাত্রদের ভোটের ভিত্তিতে ছাত্রলীগের কোন শাখা কমিটি হলে সেটা একমাত্র ঢা:বি’র জগন্নাথ হল শাখা। তার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। মারামারি, গ্রুপিং, লবিং এর কোনটিতে তার সংশ্লিষ্টতা দূরে থাক কারও সাথে খারাপ আচরণ করেছে এমন দৃষ্টান্ত তার কোন শত্রুও দিতে পারবে না।
আমাদের এই প্রিয় বিপ্লব’দা ৯৮ এর ছাত্রলীগের গঠিত কমিটিতে কোন সম্পাদকীয় পদ পেল না যা ছিল অচিন্তনীয়। কেন্দ্রীয় সদস্যের চেয়ে জগন্নাথ হলের সা:সম্পাদক পদের গুরুত্বই বেশী। হয়তো অভিমান নিয়ে রাজনীতি ছেড়ে দিলেন। ছাত্রলীগ এক সাংগঠনিক নেতা হারায়। ২০০১ এর পর বিসিএস ক্যাডার হবার পর আগের দলীয় পরিচয় বিএনপি সরকারের নীতি অনুযায়ী চাকুরীর বাধা হয়ে দাড়ায়। চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। অথচ আমাদের চেনাজানা অনেক ছাত্রদল নেতা আ’লীগ আমলে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে।
ভিপি জয়নাল : ফেনী অনেক কল্প-কাহিনীকেও হার মানায়:
ফেনীর একক আধিপত্য ছিল জয়নাল হাজারীর। জয়নাল আবেদীন ফারুক ওরফে ভিপি জয়নালের (নোয়াখালী -২ আসনের সাংসদ) উত্থান বিএনপি ও শিবিরের ক্যাডারদের সহযোগিতায়। ২০০১ এ লতিফুর রহমানের নির্দেশে সেনাবাহিনীর নিচ্ছিদ্র অপারেশন হাজারী মুক্ত ফেনী গড়া। এ অপারেশন নিয়েও বিতর্ক আছে। সবকিছু ভিপি জয়নালকে প্রতিষ্ঠা করতে সাকা চৌধুরী ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ভূমিকা রাখে বলে জানা যায়। হাজারীকে ধরতে ব্যর্থ হলেও তারা ভিপি জয়নাল এর ক্যাডার বাহিনীর আধিপত্য বিস্তারে মোটামুটি সক্ষম হয়। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, ফেনী শহরের যেকোনো কাজে হাজারীকে টাকা দিতে হতো এখন যা হয়তো ভাগাভাগি হয়। জয়নাল আবেদীনও তার ভাগ পায়। কিন্তু হাজারী গ্রামাঞ্চল নিয়ে মাথা ঘামাতো না এবং কেউ তার লোকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও সে কঠোর ব্যবস্থা নিতো বলে এলাকাবাসীর মত।
হাজারী শূন্য ফেনীতে নির্বাচন ও তৎপরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষ বিশেষত সংখ্যালঘুদের উপর যে নির্যাতন চালানো হয় তা কল্প-কাহিনীকে হার মানায়। পূজার সময় ধর্ষণ করা বিএনপি-জামাত কর্মীদের নিত্য ঘটনা ছিল। কেউ সম্মানের ভয়ে কিছু প্রকাশ করতনা। এখনও সেই এলাকার বড়-বাড়ীসহ অনেক সংখ্যালঘু তাদের সম্পদ রেখে চলে যায়। ভূমি রেকর্ড দেখলে অবাক হতে হয় যে ভিপি জয়নালের এলাকার একটি বড় অংশ অর্পিত সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। এর অনেক সম্পত্তি তৎকালীন ডিসির নির্দেশে অর্পিত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ যায়।
২০০১ এর পর অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করে সে বিপুল টাকা উপার্জন করে বলে জানা যায়। দূদক ২০০৬ পরবর্তীতে টাকার উৎস নিয়ে একটি মামলা করলেও প্রচলিত আইনের সুযোগে মুক্তি পায়। ২০০৯ সালে অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে সেই ব্যবসা থেকে হাত গুটাতে হয়।
হরতালে পুলিশের পিটুনি:
হরতালের বিরুদ্ধে একসময় সোচ্চার এই বিএনপি নেতার পিটুনি খাওয়ার প্রেক্ষাপট এরকম:
* সংসদ অধিবেশনে যোগ না দিলেও ন্যাম ভবনে থাকতে বিবেকে বাধে না। জনগণ ভোট দিয়েছে সংসদে জনতার কথা বলার জন্য। কিন্তু সংসদে যোগ দেয় শুধু সদস্যপদ টিকিয়ে রাখতে এবং সরকারী বেতন-ভাতা হজম করতে। এই মহান নেতা ন্যাম-ভবন থেকে মহিলা এমপি পাপিয়াসহ মহিলা-কর্মী বেষ্টিত হয়ে হরতাল কর্মসূচী শুরু করে।
* ভিডিও গ্রাহকরা আসার কর্মীর সংখ্যা বাড়লে জয়নাল কয়েকটি বাসে ইটপাটকেল মারে এবং মূলত জামাত-কর্মীরা এতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
* পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার অনুরোধ করা হয়। অনুরোধের প্রতি-উত্তরে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে মন্তব্য করে। পুলিশ এ্যাকশান নেয়ার কথা বললে “রাখ তোর এ্যাকশন”, “দুই-টাকার চাকর”, “মার শালাদের” ইত্যাদি বলা হয়, মহিলা এমপি পাপিয়া গালাগালিতে পারদর্শিতা দেখায়। পুলিশকে উচিত শিক্ষা দেয়ার কথাও তাদের স্মরণ করিয়ে দেয় এই নেতারা।
* টিভি মিডিয়া আসা মাত্র তাদের সঙ্গীতচর্চা শুরু হয় এবং সংসদ অভিমুখে যাত্রা করে এবং বাসে আক্রমণ করার নির্দেশ দেয়।
* এতটা উদারতা যদি কোহিনুর মিয়ারা দেখাতো তাহলে কোন আ’লীগ নেতা মার খেতো না। যাই হোক তারপরও তাকে বলা হয় সংসদের দিকে না যেতে এবং একটি বাসে আক্রমণ করলে এ্যাকশন নেয়ার কথা বলা হয়।
প্রশ্ন হল সংসদে তাদের কি? হরতালে সংসদে তারা কি করবে? সংসদের অনেক এলাকা-তো স্বাভাবিক সময়েও সংরক্ষিত।
* এসি বিপ্লবের উত্তরে দূর হ বলে তাচ্ছিল্য করলে কোন বিবেকবান লোক চুপ করে থাকবে? প্রতি-উত্তর কঠোরতার সাথে দেয়া হয় যা কোন অস্বাভাবিক নয় কিন্তু সে তাকে মারার জন্য বারবার পুলিশকে উস্কানি দিতে থাকে। পাপিয়া “মাগীর বাচ্চা” বলে গালি দেয়।
* এই সাহসী নেতা একসময় পুলিশের ভয়ে দৌড় দেয়। অবাক ব্যাপার! ইতোমধ্যে এক পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেও দেয়া হয়।
কিছু প্রশ্ন:
* পুলিশের দায়িত্ব জনগণের ও তাদের সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করা।
* একজন নির্বাচিত সাংসদ সংসদে না যেয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সংসদে ঢুকতে চাইবে, বাস ভাংচুর করতে চাইবে এখানে সে কতটা নেতা-সুলভ পরিচয় দিয়েছে। আওয়ামী লীগের আহুত হরতালে যেখানে বাধা দেয়া হতো সেখানেই থেমে সমাবেশ হতো। এই প্রেক্ষিতে পুলিশ কি চেয়ে চেয়ে দেখবে?
* টাকা থাকলে এমপি হওয়া যায় কিন্তু ছাত্রনেতা হবার সৌভাগ্য কতজন এমপির হয়েছে তা জানিনা কিন্তু মেধার চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া একজন ছাত্রনেতা গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পর্কে অবগত। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও শুয়োরের বাচ্চা, মাগীর বাচ্চা বলে গালি দেবার পরও যে সংযম দেখিয়েছে তা প্রো-বিএনপি পুলিশের কাছে আ’লীগ কখনও পায়নি।
* পরবর্তীতে নিজে শার্ট খুলে উস্কানি দিয়ে পুলিশকে ধাক্কা মারা এর ফলশ্রুতিতে জুনিয়র পুলিশরা তাকে যে ধোলাই দিয়েছে সে স্থানে আমি নিজেকে চিন্তা করলে ভাবি আরও ট্রিটমেন্ট দেয়া দরকার ছিল।
ভাই কি আওয়ামী লীগ করেন!
বিপ্লব সরকার আগে কি ছিল, কি করতো তা এ ঘটনার সাথে জুড়ে দিলেন।
সবকিছু একপক্ষে না নিয়ে বরং সরকারের বা পুলিশের ভাল কাজের সুনাম করেন আর খারাপ কাজের দুর্নাম করেন, বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে সেটাই আমাদের দায়িত্ব। ধন্যবাদ।
ভাই একপক্ষীয় কোন কথা বলবেন না প্লীজ। জয়নুল সন্ত্রাসী বা আর যাই হোক তা আমার দেখার দরকার নাই। পুলিশের এমন গুন্ডামী কোনভাবেই মানা যায় না।
httpv://www.youtube.com/watch?v=mJlrg9qE8eE