৪১ জন স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর বেদনা অসহনীয়

আমি ভাষাহারা, কান্না দমিয়ে রাখতে পারছি না। আজ পত্রিকায় খবরটা পড়ার পর থেকে অস্হির অস্হির লাগছে। এটা এমন একটা ঘটনা যে এ ক্ষতি কিছুতেই পূরণ হবার নয়।

প্রচন্ড রাগ লাগছে, কার উপর জানিনা!! এমন দূর্ঘটনা মেনে নিতে ইচ্ছা করে না। ১৩-১৪ বছরের বাচ্চাগুলো খেলা দেখে আনন্দ করতে করতে আসছিল, ড্রাইভারের সামান্য ভুলের কারনে ৪১ টা তরতাজা জীবন শেষ হয়ে গেল। বাচ্চাগুলোর পরিবারগুলোর কি অবস্হা! ভাবতেই গা শিরশির করে। বাবা-মাদের হয়তো সারাজীবন এই শোক বহন করে চলতে হবে। আমার আত্মীয় এক পরিবারকে দেখেছি তাদের সন্তান দূর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর বাবা মা দুজনেই এখন প্রায় পাগলের মতো অবস্হা। মারা যাওয়ার দুবছর পরেও দিনের অনেকটা সময় তাদের আহাজারি করে কাটে, ঐ বাসায় গেলে আমার খুব অস্হির অস্হির লাগে।

মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দিবেন। ২৫ হাজার টাকা দিয়ে তাদের কি হবে! একটা জীবনের মূল্য কি ২৫ হাজার টাকা! ২৫ হাজার টাকাই তাদের শোক ধুয়ে মুছে যাবে!

বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ প্রাণ হারায়, দুনিয়ার আর কোন দেশের এমন হয় বলে মনে হয় না। আর, আমার মতে ৯০% সড়ক দুর্ঘটনা হয় ড্রাইভারদের ভুলের কারনে। বাংলাদেশের সড়কগুলো আন্তর্জাতিক মানের করার দিকে সরকারের কোন নজর নেই। আমাদের দেশে যেকেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স পায় দিলে, গাড়ি ভাল চালনোর দরকার পরে না। গাড়ি চালানো না শিখেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। কিছু টাকা দিলেই লাইসেন্স করে দেয়। সরকারের এই দুর্নীতির দিকে কোন নজড় নাই, নিয়মিত ড্রাইভারদের লাইসেন্সও পরীক্ষা করা হয় না, সচেতনতা তৈরিরও কোন উদ্দ্যোগ নাই। মাঝে মাঝে ট্রাফিক কন্ট্রোল পুলিশ বাস ট্রাক থামিয়ে লাইসেন্স পরীক্ষা করে, সেটারও মূল উদ্দ্যেশ্য টাকা, টাকা দিলেই আবার ছেড়ে দেয়। প্রতিদিনই এদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ প্রাণ হারায়, কোন নজর নাই সেদিকে, যেমনে চলছে তেমনেই চলে। এটা এখন নিত্য নৈমেত্তিক ঘটনা হয়ে গেছে, সবাই মেনে নিয়েছে। আমরা আবার ধর্মপ্রাণ মানুষ, সব দোষ আল্লার ঘাড়ে চাপিয়ে দায় থেকে মুক্তি নেই। আল্লার মাল নাকি আল্লা নিয়ে যায়, দুর্ঘটনায় কারো কোন হাত নাই?

এমন ঘটনা মাইনা নিতে কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে প্রচন্ড রাগ লাগে, আবার নিজেকে অসহায় মনে হয়, তারপর চোখদুটো ছলছল করে উঠে। কিছুই করার নাই। পুলিশ ড্রাইভার মফিজকে ধরার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে। তাকে ধরতে পারলে কি হবে! বাচ্চাগুলোর জান ফিরে আসবে! বাংলাদেশে কোন দুর্ঘটনায় কারনে ধরা পরা ড্রাইভারের কখনও ফাঁসি হয়েছে বলে শুনি নি। কয়দিন পর আমরা সবাই এই ঘটনার কথা ভুলে যাব, শুধু কষ্টে থাকবে সন্তান হারানো ঐ পরিবারগুলো। সরকারের তো ২৫ হাজার টাকা দিয়েই দায়িত্ব শেষ। কয়দিন পর আবার কোন বড় দুর্ঘনার কথা শুনবো। আমরা আবার সেটা নিয়ে কয়দিন লাফালাফি করবো, এভাবেই চলছে। লঞ্চদুর্ঘটনায় মানুষ তো কয়বছরে কম মরে নি! এখনও হচ্ছে। কোন প্রতিকার নাই। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নাই, যাদের অনেক টাকা পয়সা আছে তারা ভাল ভাল গাড়িতে চলাফেরা করে, দুর্ঘটনায় মরেও কম। আর গরীবেরা খালি মরেই! তাদের দিকে কারো নজর নাই, তাদের মরাতে কারো কোন কিছু যায় আসে না। বড় রকমের বৈষম্য। একটা স্বপ্ন নিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই স্বপ্ন থেকে দেশটা এখন অনেক দুরে। শোষণ আর নীপিড়ন চলছে চারিদিকে। (দুঃখিত, এক প্রসঙ্গ থেকে আরেক প্রসঙ্গে চলে গেছি। লেখার খেই হারিয়ে গেছে, মাথা ঠিক নাই।)

1 thought on “৪১ জন স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর বেদনা অসহনীয়”

Leave a Comment