গত কিছুদিন আগে জোসেফ প্রিস্টলিকে নিয়ে কয়েকটি ব্লগে লিখেছিলাম। আজ সেটি’র হুবহু কপি স্বপ্নবাজ ব্লগে শেয়া করলাম।
আমি কারও জন্মদিন বা মৃত্যুদিন পালন করি না।তবে আমার একটি অভ্যাস আছে যে, ডায়রীতে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্মতারিখ ও মৃত্যু তারিখ লিখে রাখি। আর মাঝে মাঝে দেখি যেদিন যার জন্মদিন বা মৃত্যুদিন সেদিন তার জীবনী পড়ি। এভাবে বারবার পড়ি। প্রতিদিন পড়ি না, তবে মাঝে মাঝে পড়ি। আর যেদিন কারও জন্মদিন ডাযেরীতে থাকে না। সেদিন আমি অজানা তারিখে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের জীবনী পড়ি।যেমন এখন পর্যন্ত ঈমাম বুখারী’র জীবনী অনেক বার পড়েছি। তেমনি বিজ্ঞানীদের মধ্যেও অনেকের জীবনী পড়েছি।
আজ ৬ই ফেব্রুয়ারী। আমার ডায়েরী বলছে আজ জোসেফ প্রিস্টলি’র মৃত্যুদিন।
চিনতে পারছেন তো? অক্সিজেনের আবিষ্কারক।
জোসেফ প্রিস্টলি:
জন্ম: ১৩ই মার্চ ১৭৩৩সাল।
জন্মস্থান: ব্রিটেন (ইংল্যান্ড বা যুক্তরাজ্য)।
জন্মপরিচয়: তিনি ইংল্যান্ডের লিড্স শহরের উপকন্ঠে এক গরীব তাতিঁর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। যখন তার বয়স মাত্র তিন বছর তখন তার মায়ের মৃত্যু হয়। আর সাত বছর বয়সে মারা যান তার পিতা।
বলতে গেলে একেবারে জন্ম-অনাথ ছিলেন প্রিস্টলি। এরপর এ অনাথ শিশুর দেখভালের দায়িত্ব পড়ে তার ফুফু’র উপর। তিনিও গরীব ছিলেন। তবু তিনি ভাইয়ের ছেলেকে নিজের কাছে রেখে মানুষ করতে লাগলেন। ১৭৪০সালে তিনি তার ফুফুর বাসায় আশ্রয় নেন।
তার ফুফু ভাল ছিলেন তিনি তার ভাইয়ের ছেলেকে পড়ালেখা করানোর জন্য পাঠান স্থানীয় নরফরমিটি একাডেমীতে।
তার ফুফু’র ইচ্ছা ছিলো যে বড় হয়ে প্রিস্টলি ধর্মযাজক হবে। কারণ সেকালে ধর্মযাজকদের সামাজিক মর্যাদা অনেক ছিলো।
বাল্যকালের পড়ালেখা:
তিনি খুব ভালো ছাত্র ছিলেন। বেশ অল্পদিনের মধ্যেই তিনি ইংরেজী,ফরাসি,ইতালিয়ান,আরবী ও জার্মান ভাষা শিখে ফেলেন।
সেসময় তিনি গণিতশাস্ত্রও শিখতে লাগলেন। বিশেষ করে বীজগণিত ও জ্যামিতিতে তার ছিলো বেশ আগ্রহ।
যাজকের পদ গ্রহণ;
এরপর তিনি অনার্স (স্নাতক) পাশ করার পর ধর্মযাজক-এর পদ গ্রহণ করেন।কিন্তু এ পদে সামাজিক মর্যাদা থাকলেও তেমন বেতন ছিলো না।যা বেতন পেতেন তা দিয়ে তেমন চলত না। তাই কাজের ফাকে ফাকে তিনি শিক্ষকত ও প্রাইভেট টিউশনি শুরু করেন।
তার অবদান:
ইংরেজী ব্যাকরণ লিখা; শিক্ষার সাথে সাথে জড়িত থাকতে থাকতে তিনি ইংরেজী ব্যাকরণের প্রতি আগ্রহী হওয়ার দরুন ভালো একটি ইংরেজী ব্যাকরণ লিখেন। তখন যেসব ব্যাকরণ পড়ানো হতো সেগুলোতে বেশ ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিলো।বইটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। চারিদিকে তার যথেস্ট নামও হলো।এর ফলে তার একটি ভালো চাকরিও জুটে গেলো। তিনি ডিসেন্টার্স একাডেমীতে ভাষা শিক্ষকের একটি চাকরি পেয়ে গেলেন।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার শুরু: প্রথমে তিনি ভাষার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলেও পরে তিনি রসায়ন বিভাবে যোগদান করেন। এরপর তার রসায়নের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় এবং তিনি শুর করলেন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা।
তড়িতবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা: বিখ্যাত বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিন লন্ডন বেড়াতে আসলে তিনি তার সাথে দেখা করেন। বিজ্ঞানী ফ্র্যাংকলিন তাকে পরামর্শ দেন তড়িতবিজ্ঞানের উপর বই লেখার।
বই লেখা শুরু করতে গিয়ে তিনি বেশ সমস্যায় পড়েন ।কারণ তখনও এ বিষয় নিয়ে তেমন কোন গবেষণা হয় নি।তার উপর এ বিষয়ে কোন রেফারেন্স বই ছিলো না। এগুলো নিয়েই গবেষণা করতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন যে, কার্বন একটি বিদ্যুত সুপরিবাহী বস্তু।
এ বিষয় নিয়ে তার বই লেখা শেষ হয় ১৭৬৫ সালে। তার বইয়ের নাম হলো-“তড়িতের ইতিহাস ও তার বর্তমান অবস্থা”।
বইটি বেশ সুনাম অর্জন করলো। তার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো।তখন তার বয়স মাত্র ৩২বছর।
এই বই প্রকাশের পরের বছর তিনি রসায়ন সোসাইটির সদস্য মনোনীত হলেন। এ সময় তার পূর্বের ধর্মযাজকের পদটি বহাল ছিলো।
পরিবার গঠন: এ সময়ে তাক চ্যাপেলে বদলি করে দেওয়া হলো। নতুন কর্মস্থলে তিনি বিয়ে করে সংসার পাতলেন।
এর পরের পর্বে শেষ করবো ইনশাআল্লাহ।
জোসেফ প্রিস্টলির জীবন সম্বন্ধে জানতাম না, নামটাও ভুলেই গেছিলাম, মনেই ছিল না অক্সিজেনের আবিষ্কারক কে। লেখাটার জন্য ধন্যবাদ ভাই, বিখ্যাত মানুষদের জীবনে পড়তে সবসময় খুব ভাল লাগে।
বেশ ইন্টারেস্টিং জোসেফ প্রিস্টলির জীবনী। ভাল লাগলো, অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
জোসেফ প্রিস্টলি মেধাবী আর অনেক গুনের অধিকারী ছিলেন! উনাদের মতো বড় মানুষের জীবনী আমাদের অনুপ্ররণা যোগায়। আশা করি পরের পর্বটা পাব। ধন্যবাদ।