পাবে সামান্যে কি তার দেখা… চলুন করে আসি সাধু সঙ্গঃ প্রতিবাদ জানাই বাউলদের ওপর করা অত্যাচারের

জেলা রাজবাড়ি, হাবাসপুর উপজেলার একটি ছোট্ট গ্রামের নাম চর রামনগর। এখানেই বাস করেন বাউল সাধু মোহাম্মদ ফকির। প্রতিবছরের মতো মনের টানে, প্রাণের টানে ডাক দেন সমমনা সাধুদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। তার সেই উদাত্ত আহবানে সাড়া দিয়ে সমমনা এবং একই ধর্মমতের অনুসারীরা এসে জড়ো হন ৪ঠা এপ্রিল ও ৫ই এপ্রিলের “সাধু সঙ্গ” নামক উৎসবে। মেতে ওঠেন আধ্যাত্মিক মিলনমেলার এক আকাঙ্খিত ক্ষণে।

পবিত্র কোরানে আছে, “লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন” (সূরা কাফিরুন) অর্থ- “যার যার দ্বীন বা জীবন বিধান তার তার কাছে”। আরো বলা আছে, “আল্লাহর তরফ থেকে এটা উপদেশ, যার যেমন ইচ্ছা, সে তার সৃষ্টিকর্তার পথ অনুসরন করুক।”(সুরা মুযাম্মিল ৭৩, আয়াত ১৯)। অথচ কথিত ইসলামের রক্ষাকারীরা সহ্য করতে পারেনাই নিরীহ ও প্রকারন্তরে ইসলামেরই আরেকটা শাখার অনুসারীদের, সূফি সাধক বাউলদের! তারা অনুষ্ঠানের মাঝেই ঢুকে পড়ে। ধরে নিয়ে যায় ২৭ জন আমন্ত্রিত বাউল সহ মোহাম্মদ ফকির কে স্থানীয় মসজিদে। জোর করে তাদের পড়ান “তওবা” এবং কেটে দেন চুল, দাঁড়ি ও গোঁফ! চরম অপমান ও ঘৃণার মাঝদিয়ে বন্ধ হয়ে যায় বাউলদের ধর্মীয় আচারভিত্তিক অনুষ্ঠান “সাধুসঙ্গ”।

দেশব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে পুলিশ প্রশাসন গত ৯ এপ্রিল ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে। ঘটনার ১১ দিন পর রিয়াজুল হক মৃধা ওরফে মুফতী রিয়াজ নামে এক আসামি ধরা পড়লেও তদন্তকারী কর্মকর্তার দুর্বলতা(!!) ও ভুল ফরোয়ার্ডিংয়ের(!!!) কারণে একদিন পরই আদালত থেকে সে জামিনে ছাড়া পায়।

ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় এমপির ছত্রছায়ায় ঘোরে ফেরে ১৩ আসামী। বাস করে এমপির ঠিক করে দেয়া স্থানে। গতকাল, ১৯শে এপ্রিল মামলার বাদী মোহম্মদ ফকিরের সাক্ষর নেয়া হয় জোর করে একটি সাদা কাগজে। উপস্থিত ছিলেন এমপি, তার লোকজন ও সেই ১৩ আসামী, যাদের পুলিশ “খুঁজে পাচ্ছেনা”! পরে সংবাদপত্রে খবর পাঠানো হয়, মিটমাট হয়ে গেছে! এখনো ঘরে ফিরতে পারেননি মোহম্মদ ফকির, লুকিয়ে চুরিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁর! অব্যাহত হুমকি করে তুলেছে তাঁর জীবন কে পর্যুদস্ত।

সাধু মোহম্মদ ফকির এখন চান তাঁর শুরু করা অনুষ্ঠানটি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মাঝ দিয়ে শেষ করতে। ফিরে চান তাঁর হারানো গৌরব তাঁর গ্রামের মাঝে। তাই আবারো আয়োজন করা হয়েছে “সাধুসঙ্গ”, আগামী ২৮শে এপ্রিল, বৃহস্পতিবার এবং ২৯শে এপ্রিল শুক্রবার।

কিভাবে যাবেন?

লালন ভক্ত ধাম, চর রামনগর, হাবাসপুর, পাংশা, রাজবাড়ী।
আরিচা ঘাট ঢাকা থেকে দুই ঘন্টার রাস্তা, ঘাটে ফেরী পার হতে হবে। ওখান থেকে অনুষ্ঠান স্থল ১ ঘন্টার রাস্তা। পাংশা থেকে আশ্রম পর্যন্ত “লালন ভক্ত ধাম” নামে চিন্হিত করা সাইন লাগিয়ে রাখা হবে। আয়োজক রা চেষ্টা করছেন যতটুকু সম্ভব সাহায্য করার জন্য। কম্বল এবং বালিশ আনতে পারেন, যদি রাতে থাকতে চান। তাঁবু টাঙ্গানো হবে, সবার সুবিধার্থে।

আমরা যাচ্ছি তাঁর পাশে থাকতে, তাঁর অধিকার কে রক্ষা করতে, যে অধিকার এই দেশের সব জনগনের আছে! নিজের মত, নিজের ধর্ম, নিজের বিশ্বাষ কে নিজের মতো করে পালন করার। সে অধিকার যদি আমরা নাই দেই, তাহলে সুন্নি বাদে দেশের সব জনগন কে মেরে ফেলা হোক। ইন্ডিয়া মেরে ফেলুক ব্রাক্ষ্মণ বাদে সব জনগন…মুসলিমদের কে সহ, আমেরিকা মেরে ফেলুক ক্যাথলিক বাদে আর যা আছে……… কিন্তু সেটা কি গ্রহনযোগ্য?

বাউলদের কখনো কারো ঘরে আগুন দিতে দেখেছেন? দেখেছেন পাথর ছুড়ে মারতে? দেখেছেন রগ কেটে দিতে? দেখেছেন বোমা বুকে বেঁধে ঝাপিয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ খুন করতে?

কি করাচ্ছে আমাদের এগুলো? ধর্মের নামে অন্ধত্ব নয় কি?

ভীত মানুষ কে সহজেই প্রভাবিত ও ম্যানিপুলেট করা যায়, আমরা কাউকে ভীত দেখতে চাই না। হাতে হাত রেখে বাউলদের পাশে দাঁড়াতে চাই, বলতে চাই, না, তোমরা একা না।

কি, আপনি যাবেন না?

ফেসবুকে ইভেন্টের লিংক।

http://www.facebook.com/#!/event.php?eid=117030678376072

4 thoughts on “পাবে সামান্যে কি তার দেখা… চলুন করে আসি সাধু সঙ্গঃ প্রতিবাদ জানাই বাউলদের ওপর করা অত্যাচারের”

  1. দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এত বড় একটা ঘটনার যেভাবে প্রতিবাদ হওয়া উচিত ছিল সেভাবে হয়নি। পত্রিকাগুলোতেও তেমন একটা নিউজ নাই!
    যাওয়ার ইচ্ছা আছে, সময়মতো আপনার সাথে যোগাযোগ করবো।

Leave a Comment