জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ২৭(৪) ধারায় বলা আছে, প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়ন অভ্যন্তরীন উৎস থেকে হতে হবে। সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের বেতন সেমিস্টার প্রতি ৩৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০,০০০ টাকা করার ঘোষাণা দিয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন এ অস্বাভাবিক বর্ধিত বেতনের বিপক্ষে।
বাস্তবতা হলো, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগ অংশই মধ্যবিত্ত আর গরীব পরিবার থেকে আসা। অনেকেরই সামর্থ নাই এ পরিমাণ অর্থ যোগার করার। অনেক ছাত্রছাত্রী আছে যারা টিউশনি করে তার থাকা খাওয়া আর পড়ার খরচ যোগায়। এখন এই ছাত্রছাত্রীদের কি হবে? তাদের লেখাপড়া কি বন্ধ করে দিতে হবে?
শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। সরকারের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে উচ্চ শিক্ষা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পরে না। যাদের টাকা আছে তারা পড় আর যাদের নাই তাদের বেশি পড়ালেখার দরকার নাই, এমনই হলো সরকারের নীতি।
সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ সরকার বহন করবে, শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাদ যাবে কেন? অপ্রয়োজনীয়, মূল্যহীন, অলাভজনক খাতে সরকার বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে পারে, আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০-৪০ কোটি টাকা দিতে তাদের সমস্যা! শুনলাম জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম চেঞ্জ করতেই সরকারের খরচ হবে ১২০০ কোটি টাকা। অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফরে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে, সামরিক খাতে প্রতি বছর বাজেট বাড়ানো হয়, শুধু শিক্ষা খাত নিয়ে সরকারের সমস্যা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পুরোপুরি যৌক্তিক এবং এটা তাদের ন্যায্য দাবী। শিক্ষাখাত বানিজ্যিকি করার বিরুদ্ধে আমাদের সকলের সোচ্চার হওয়া উচিত। তাদের বর্ধিত ফি কমানোর আন্দোলনে আমাদের সরাসরি অংশগ্রহন করে তাদের সাপোর্ট দেয়া দায়িত্ব, সরাসরি অংশগ্রহন করতে না পারলেও উচিত তাদের সমর্থন করা।
সরকার তাদের চরিত্রমত আন্দোলনকারীদের উপর দমন পীড়ন নির্যাতন চালাচ্ছে। কয়দিন আগে প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশি নির্যাতনের পর আজকেও শাহবাগ থেকে ২৯ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার বিকাল চারটাই শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ ছিল। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ছাত্রছাত্রীরা সেখানে জড় হতে থাকলে পুলিশ ২৯ জনকে গ্রেফতার করে। ‘জাতীয় স্বার্থে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট’ এর ব্যানারে অনেক মানুষ শাহবাগে বিকাল সাড়ে চারটায় সমাবেশ ও মিছিল করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবীকে সমর্থন দিতে অনেক ব্লগার এ সমাবেশে উপস্হিত হয়। তারা আটক ২৯ জন শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবীও করে।
স্বাস্থ্যসেবার মত শিক্ষা ও তাহলে মৌলিক অধিকার থেকে পণ্যে রূপান্তরিত হচ্ছে।