রমজান মাস হলো সংযমের মাস। ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি একথা। এক মাস নির্দিষ্ট সময় অনাহারে থেকে মুসলমানরা আহারে সংযম পালন করে। গুরুজনদের মুখে শুনেছি এ সংযমের উদ্দেশ্য হলো গরীবদের অনাহারে থাকার কষ্ট অনুভব করা। শুধু আহারেই সংযম না, এ মাসে সকল বিষয়েই সংযম পালন করতে হয়। নারী পুরুষ মিলনে সংযম, পোশাক পরিচ্ছেদে সংযম, দৃষ্টিতে সংযম, কথা বার্তায় সংযম, খরচে সংযম ইত্যাদি ইত্যাদি।
এত এত সংযমের মাসে কিন্তু দেশের চেহারা অন্যরকম হয়ে যায়। আতঙ্কজনক অন্যরকম, প্রতি বছর রোজা শুরুর আগে থেকেই আতঙ্ক অনুভব করি, এই ভয়ে না যে – না খেয়ে থাকতে হবে একটা নির্দিষ্ট সময়। রমজান মাস হলো মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্দশার মাস বিশেষ করে মধ্যবিত্ত আর গরীবদের। উচ্চবিত্তদের জন্য চরম বিলাসিতা আর অপচয়ের মাস। চারিদিকে সংযম না অসংযম চোখে পরে।
ইফতারি আর সেহরিতে খাবারের ধুম পরে যায়। কিছু সময় সংযমী থাকার প্রতিক্রিয়ায় ইফতারির সময় অসংযমের প্রতিযোগীতা চলে। কত পদের আইটেম! আবার, মাঝে মাঝে ইফতার পার্টিতে গেলে, ইফতার শেষে পিচ্চি পিচ্চি টোকাইগুলোর খাবারের একটু উচ্ছিষ্ঠ সংগ্রহের জন্য ঘুরাঘুরি দেখলে বুঝা যায় এদেশের গরীবমানুষগুলোর অবস্হা। তারা দুবেলা খাবার যোগাড় করতে পারে না। বাজার যে চরা!
রাস্তায় অতিরিক্ত রকম জ্যাম, জ্যামের মধ্যে বাসে বসে ঘামি আর মনে মনে রোজার গুষ্ঠি উদ্ধার করি। জ্যাম হবে না কেন! মার্কেটে মার্কেটে যে ওনাদের কেনা কাটার ধুম লেগেছে, গাড়ি টাকা পয়সা নিয়ে সপিং মল গুলোর উপর হামলে পরছেন তারা।
ধান্ধাবাজি আর দুর্নীতির ক্ষেত্রেও কিন্তু সংযমের দেখা মেলে না। শপিং মলের বোঝা মাথায়, দুর্নীতি না করে উপায় কি! রিকশা ভাড়া বেশি, রিকশাওলাদের আর দোষ কি? বৌ বাচ্চাদের মার্কেটে না নিয়ে যেতে পারুক, ঈদের দিন তো অন্তত সেমাই পোলাও এর যোগান চাই। চুল দাড়ি কাটতে গেলে বোনাস, নাপিতদের কি আর বলার! সবাই সবার মতো করে বোনাস আদায় করছে, ওরা বঞ্চিত হবে কেন?
সংযমের মাসের ফ্যাকরায় রাস্তাঘাটে এ্যক্সিডেন্টের পরিমাণও যায় বেড়ে। বেশিটাকা দিয়ে যুদ্ধ করে টিকেট কেটে ডাবল সময় যানবাহনে অতিবাহিত করেও বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা মেলে না। অপরিপক্ক ড্রাইভাররা বেহাল রাস্তাঘাটে রমজানের অতিরিক্ত চাপে অসংযমী হয়ে এ্যক্সিডেন্ট ঘটিয়ে ফেলে।
বেরোজদারদের জন্য এ মাসটা বড় কষ্টের। দুপুরবেলা ভাত খামু, কিন্তু হোটেলগুলোয় ভাত বেচা বন্ধ, তারা এসময় ইফতারির ব্যবসার জন্য প্রস্তুতি নেয়। সকালে নাস্তা করমু, লুকায়ে খাইতে হয় কাপড় দিয়ে ঘেরা দোকানে। কাওকে খাইতে দেখলে নাকি সংযম পালনকারীদের সংযম আঘাতপ্রাপ্ত হয়! রিকশায় বসে একটা সিগারেট জ্বালামু, মানুষজন কেমন চোখে তাকায়ে থাকে, ভয়ও লাগে, কখন জানি সংযমীরা প্রতিরোধ করে বসে। রাত তিনটা থেকে শুরু হয় চেচামেচি, ঘুম না ভাঙ্গিয়ে ছাড় নাই।
ঈদ শেষ হয়ে গেলে একটু শান্তি পাই যে দুইটা মাস অন্তত্ব অবস্হা স্বাভাবিক থাকবে।
ছন্নছাড়া,
ধন্যবাদ আপনার লেখাটির জন্যে ।
কোনও ছন্নছাড়ার মতো কথা বলেননি আপনি । একেবারে বাস্তব তুলে ধরেছেন । কিন্তু কাদের জন্যে ? কে শুনবে এই সব কথা ? এরা সবাই “প্রথা” পালনকারী । কেউই নেই যারা প্রথার “উদ্দেশ্যকে” বোঝেন এবং তা পালন করেন । এরা জ্ঞানপাপী । বোঝার ইচ্ছেও তাদের নেই । হয়তো সেই জ্ঞানটুকুও তাদের নেই ।