প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে একদিন

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। জোটের প্রধান নেতারা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ডিনারে উপস্হিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি আছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদ এবং সরাষ্ট্রমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, ডানদিকে বসেছেন ধর্মমন্ত্রী আল্লামা আহমদ শফি, বানিজ্যমন্ত্রী কাদের সিদ্দিকী, শিক্ষামন্ত্রী দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, চরমোনাই পীর রেজাউল করিম, কাদের মোল্লাসহ জোটের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং বামপাশে পররাষ্ট্র মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ বিএনপির অন্যরা। সময়টা ২০১৪ সালের ১৩ই ডিসেম্বর। গত দু’বছরের স্মৃতিচারন ও ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে করনীয় সম্বন্ধে আলোচনা চলছে।

“এবার বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া বন্ধ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে বেশ্যাপণা প্রতিরোধে সরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করছি।”

ধর্মমন্ত্রীর কথায় নিজামী সম্বিত ফিরে পেলেন। মনে মনে বিরক্ত, শালার ধজভঙ্গ হিজরা বুড়ো আর প্রশ্ন করা টাইম পাইলি না। প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তিনি মধুর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। তার ও প্রধানমন্ত্রীর বয়স ৩৩ বছর কমিয়ে এক রাতের প্রেমে বিভোর ছিলেন। শালার মাথা নষ্ট, গোলাপী আছিল একখান মাল। এখন তার লগে যেই সম্পর্ক, এইডা যদি তখন হইতো!

“জ্বি সফি ভাই, এই ব্যাপারে সকল নির্দেশনা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়ে গেছে। এবারের বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধ তালাবন্ধ থাকবে, যেকোন স্হানে ফুল দেওয়ার নামে পুজা করা কঠোর হস্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে। শেখ মুজিবের ভন্ডামী দেশপ্রেমিক ধর্মপ্রাণ জনগনের কাছে উম্মুক্ত করা হবে। উনি ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্হানিদের হাতে নিজেকে স্বইচ্ছায় ধরা দিয়ে কি গোপন প্লান করেছিলেন তা প্রকাশ করা হবে। উনি যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চাইতে পাকিস্হানের প্রধানমন্ত্রী হতে বেশি আগ্রহী ছিলেন তা প্রকাশ করা হবে। আপনি সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্হা করুন।“

“আরও প্রচার করার ব্যবস্হা করতে হবে যে, জিয়াউর রহমান ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না, জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে বাঙালী মুক্তিযুদ্ধে নামতো না।“ প্রধানমন্ত্রী আবেগী কন্ঠে বললেন।

প্রধানমন্ত্রীর কথায় নিজামীর নিম্নাঙ্গে একটু শিরশিরে অনুভূতি হলো। কি এক আজব সমস্যা, গোলাপীর কন্ঠ শুনলেই তার ঐখানে শিরশির করে। আবার একটু দুঃখও হয়, বয়স হয়ে গেছে, ওইটা আর দাঁড়ায় না। “জ্বী ম্যাডাম, তথ্যমন্ত্রী মাহমুদুর রহমান ইতিমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের দলিল নতুন করে লেখার কাজ শুরু হয়েছে।

“অধ্যাপক গোলাম আজম একটা আর্জি জানিয়েছেন ম্যাডাম। স্বাধীনতা যুদ্ধে উনিই প্রথম শেখ মুজিবের চতুরী ও বিশ্বাসঘাতকতা আবিষ্কার করেন এবং এ বিষয়ে জনমত গঠনের চেষ্টা চালান। দেশ স্বাধীন হোক উনিও এটা চাচ্ছিলেন কিন্তু শেখ মুজিবের পিছনে যুদ্ধ করতে উনার আপত্তি ছিল। নিজেই স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিলেন। অধ্যাপকের আর্জি এই বিষয়টা মুক্তিযুদ্ধের দলিলে উপস্হাপন করা হোক এবং উনাকে স্বাধীনতার পদক দেওয়া হোক।“

“ঠিকআছে ব্যাপারটা সংস্লিষ্ট জায়গায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিন। স্বাধীনতার পদক কারা পাবেন তা কাদের সিদ্দীকির সাথে আলোচনা করে ঠিক করুন।” প্রধানমন্ত্রী মুচকি হাসলেন।

কাদের সিদ্দীকি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়, কিছু বলেন না। তার মন কিছুটা বিমর্ষ। একটা মন্ত্রীত্বের বড় শখ ছিল। জীবনে অনেক কিছু পাইলেও এটা পাওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ তার সাথে সুবিচার করেনি। কিন্তু বর্তমান মন্ত্রীপরিষদের সবগুলো শুয়োরের চাইতেও খারাপ। এদের ঘোৎ ঘোৎ এখন অসহ্য ঠেকে।

দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মহা বিরক্ত মুখে বসে আছেন। কোন আলোচনায় মন নাই, সবকিছু তিনি শুনছেনও না। মনে মনে গালি দিলেন, ‘শালী বেপর্দা বুড়ি আর ডাকার টাইম পাইলি না, তোরে দেখলে আর মেশিন খাড়ায় না’। ছাত্রী শিবিরের দু’জন কলিজু তার অপেক্ষায় আছে সরকারি বাসভবনএ। গতকালও ছিল দুজন। গতরাতের কথা মনে পড়তেই সরসর করে দাড়ায়ে গেল সাড়ে সাত ইঞ্চি মেশিনটা। মাইয়াগুলো বড়ই স্মার্ট। চোষণ লেহন আর কত রকম স্টাইল! অস্হির ভালবাসা। সারাজীবন পূন্যের ফল দুনিয়াতেই কিছুটা দিচ্ছেন আল্লাপাক।

দুই

ঘটনার সূত্রপাত গণজাগরন মঞ্চ শুরু হওয়ার পর থেকে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে আন্দোলন শুরু হয় শাহবাগে। জামায়াতে ইসলামের অস্হিত্ব হুমকির মধ্যে পরে। কিন্তু রাজনৈতিক ছক পাল্টে যেতে বেশিদিন সময় লাগেনি। পরিকল্পনার প্রথম অংশে ছিল রাজীব হায়দারকে খুন করে তার নামে ইসলামকে কলংকিত করার প্রচার চালিয়ে সাধারন ধর্মপ্রাণ মানুষদেরকে ক্ষেপিয়ে তোলা। প্রথম অংশ সফল হওয়ার পর পরের পরিকল্পনা ছিল একটা গৃহযুদ্ধ শুরু করা, দেশের কিছু অঞ্চল দখল করে সেখান থেকে যুদ্ধ চালানো। সাঈদীর রায়ের পর সে চেষ্টা করা হয় কিন্তু অস্ত্রের একটা বড় চালান ধরা পড়ায় সময়মতো জিহাদীদের হাতে অস্ত্র পৌছায় নি। পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর আবারো নতুন করে বড় আকারে শুরু করা হয়, এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় হেফাজতে ইসলামকে। বেছে নেওয়া হয় শাহবাদ আন্দোলনে প্রথম সারিতে থাকা ৩০০ জন ব্লাগারকে। এদের নামে ফেসবুক প্রফাইল ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত ব্লগ খুলে ধর্মবিরোধী লেখা প্রকাশ করা হয় এবং আমার দেশ, নয়াদিগন্ত, ইনকিলাব সহ কয়েকটি পত্রিকার মাধ্যমে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় আন্দোলন।

পরিকল্পনার এই অংশে ছিল কিছু হত্যাকান্ড। পুলিশের সাথে সংঘর্ষ শুরুর অপেক্ষায় থাকতো কিছু সশস্ত্র জিহাদী যোদ্ধা। সংঘর্ষ শুরুর পরপরই এরা আড়াল থেকে গুলি করে কিছু মাদ্রাসা ছাত্র ও আন্দোলনকারীদের হত্যা করতো, দায় চাপতো পুলিশের উপর। রাতের অন্ধকারে জিহাদী যোদ্ধারা হত্যা করা শুরু করে মসজিদের ঈমামদের ও মাদ্রাসা ছাত্রদের। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। এরইমধ্যে জামায়াতের কিছু বন্ধু রাষ্ট্র থেকে পৌছায় অস্ত্রের বড় বড় কিছু চালান। জিহাদী স্কোয়াড গঠন করা হয়, কয়েকটি শহর দখল করে নেয় এরা।

আন্তর্জাতিক এবং সেনাবাহিনীর চাপে ২০১৩ সালের ২১ সেপ্টম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেয় তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে। বিএনপি ও জামাতের দেওয়া তালিকা অনুসারে তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। মৌলবাদীদের দাপট তখন সারাদেশে।

২০১৪ সালের ১ লা জানুয়ারি নির্বাচনে জয়লাভ করে জামাত ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট।

সরকার ও মন্ত্রীপরিষধ গঠন হয় জামাতের ইচ্ছা অনুযায়ী। জেলে থাকা সকল যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রীপরিষদে স্হান দেওয়া হয় এবং তাদের জেল থেকে মুক্ত করে আনা হয়। বাকি যারা আন্দোলনে সহয়তা করেছিল সকলকেই খুশি করা হয়।

সংবিধান ও আইন পরিবর্তন করা হয়। নতুন সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। ইসলাম বিরোধী কথা বলার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। মেয়েদের হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক, ছেলেমেয়ে একসাথে অবাধ বিচরন নিষিদ্ধ, মূর্তি স্হাপন নিষিদ্ধ, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। ৩০০ জন মুক্তমনাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়, অপরাজেয় বাংলাসহ দেশের সমস্ত মূর্তি অপসারণ করা হয়, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিগুলোতে আরবী ও ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়।

সংখ্যালঘুরে উপর শুরু হয় নির্মম নির্যাতন, বেশিরভাগই চলে যেতে বাধ্য হয় পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে। বাংলাদেশ এখন ৯৯% মুসলিমের দেশ।

Leave a Comment