স্যাটলেইট আগ্রাসন ঃ অবক্ষয়রে কবলে মানব সভ্যতা

বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদান হল স্যাটেলাইট প্রযুক্তি। তাৎক্ষনিকভাবে তথ্য আদান প্রদান, সংবাদ সরবরাহ এমনকি চিত্ত বিনোদনের উগ্র আয়োজনের সাফল্যে গড়ে উঠেছে নতুন এক আকাশ সংস্কৃতি। এর স্থানীয় নাম ডিশ এন্টেনা। স্যাটেলাইট আগ্রাসনের কারণে লেজকাটা ইউরোপ আমেরিকায় পরিবার প্রথা ভেঙ্গে যাওয়ায় জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে হাজার বছর এগিয়ে গিয়েও ধ্বংসম্মুখ সভ্যতায় পরিণত হতে চলেছে। ডিশ সংস্কৃতির বদৌলতে তারা পশুত্বকেও হার মানিয়েছে। কিছুকাল আগেও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি উন্নত বিশ্বের অবসর বিনোদনের একান্ত মাধ্যম ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নিজেদেরই তৈরি স্যাটেলাইট নামক দানবের হাতে বন্দী হয়ে কেঁদেও মুক্তি পাচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে খুন, ধর্ষন, বিকৃত যৌনাচার, আত্মহত্যাা, মাদকাসক্তি এবং অপরাধ সংস্কৃতি তাদের জীবনকে নরকের কুন্ডে পরিণত করেছে। আর এ ডিশ সংস্কৃতি মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। এ ডিশ আগ্রাসনের শিকার আমাদের এ প্রিয় ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ। আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে করেছে ক্ষত-বিক্ষত, অবক্ষয়ের যাতাকলে আটকে যাচ্ছে আমাদের সম্ভবনাময়ী যুব সমাজ, মুসলিম জাতিগুলো আজ নাম সর্বস্ব জাতিতে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা প্রিউইল, ফ্রি মিক্সিং, ফ্রি সেক্স, ফ্রি মাইড বাসা বাঁধছে মুসলিম দেশসমূহের সহল সরল মানুষের জীবনে। স্যাটেলাইট আগ্রাসনের কারণে যুব সমাজের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে অপরাধ ও অবৈধ যৌন ক্ষুধার সংস্কৃতি। এ অপরাধ ও যৌন ক্ষুধা মিটাতে লিপ্ত হচ্ছে নানা অনাচারে পাপাচারে। ফলে সমাজে খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, ভ্রুণ হত্যা, উত্যক্ত করাসহ ইত্যাদী অপকর্মগুলো বেড়েই চলছে। যা রীতিমত আঁতকে উঠার মত। আতংকগ্রস্ত করে তুলেছে দেশের সচেতন নাগরিকদের। স্যাটেলাইট  প্রযুক্তি বা ডিশ এন্টেনা ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিস্ময়কর যোগাযোগ মাধ্যমই হল স্যাটেলাইট প্রযুক্তি বা ডিশ এন্টেনা। ডিশ এন্টেনা এখন আর কোন অপরিচিত শব্দ নয়। বিজ্ঞানের এক অভূতপূর্ব অবদান ডিশ এন্টেনা। এর সংজ্ঞায় ক্যামব্রিজ ডিকশনারীতে বলা হয়েছে-অহ ধৎঃরভরপরধষ ড়নলবপঃ ংবহঃ ঁঢ় রহঃড় ংঢ়ধপব ঃড় ঃৎধাবষ ৎড়ঁহফ ঃযব বধৎঃয. টংবফ ভড়ৎ পড়ষষবপঃরহম রহভড়ৎসধঃরড়হ ড়ৎ পড়সসঁহরপধঃরড়হম নু ৎধফরড়, ঃবষবারংরড়হ বঃপ. ংধঃবষষরঃব ফরংয-ধ ৎড়ঁহফ অঊজওঅখ ভড়ৎ ৎবপবরারহম ঃবষবারংরড়হ ধহফ ৎধফরড় ংরহমহধষং নৎড়ধফপধংঃ ভৎড়স ঝঅঞঊখখওঞঊঝ.
বাংলাদেশের অভিজাত শ্রেণীর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায় বিরাট আকৃতির ডিশ (থালা) সদৃশ একটি বস্তু বাড়ির ছাদে রাখা হয়েছে। সদা ঘৃর্ণমান কৃত্রিম উপায়ে স্থাপিত উপগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের টিভি চ্যানেলের সার্বক্ষণিক অনুষ্ঠানমালা উপভোগ করা যায়।
* বাংলাদেশে ডিশ এন্টেনা ঃ-
বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে প্রথম ভূ-উপগ্রহ ( আর্ন্তজাতিক টেলিযোগাযোগ মাধ্যম) কেন্দ্র রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় স্থাপিত হয়। এর পর থেকেই বাংলাদেশে ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে গাজীপুর জেলার তালিবাবাদে ১৯৮২ সালে, মহাখালীতে ১৯৯৫ সালে এবং সর্বশেষ সিলেটে ১৯৯৭ সালে মোট ৪টি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপিত হয়। এর ফলে সারা দেশে ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি বা ডিশ এন্টেনার ব্যবহার বিস্তার লাভ করে। এক দশক আগে বাংলাদেশে ডিশ এন্টেনার ব্যবহার শুরু হলেও, শুরুতে ডিশ এন্টেনা অত্যন্ত ব্যয় বহুল হওয়ায় এর ব্যবহার কম থাকলেও এখন অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। প্রথমে শুধুমাত্র উচুঁ পর্যায়ের সৌখিন অভিজাত শ্রেণীর লোকেরাই ডিশ এন্টেনা ব্যবহার করত। এখন আস্তে আস্তে মধ্যবিত্ত পার হয়ে নি¤œবিত্ত পর্যায়ে ডিশের ব্যবহার শুরু হয়েছে। বরং অনেক নি¤œ পরিবার গুলোতে ডিশ সংযোগ নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। অনেকে মৌলিক প্রয়োজন অপূর্ণ রেখে ডিশ সংযোগ নিচ্ছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাসিক নির্ধারিত ফ্রি দিয়ে নির্ধারিত কিছু চ্যানেল দেখানোর জন্য বিভিন্ন  ডিশের সংযোগ দেয়া হচ্ছে। এর বদৌলতে শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ডিশ পৌছে গেছে। মাত্র ৩০০ টাকা ফ্রি দিয়ে ডিশ সংযোগ দেয়া হয় এবং মাসিক ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা ফ্রি নেওয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে সারা পৃথিবী স্যাটেলাইট জ্বরে আক্রান্ত। মানুষের জীবনের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যসমূহের মধ্যে অতি  প্র্রয়োজনীয় এটি। এটি ছাড়া এখন জীবন অচল। বাড়ির ছোট্ট বাচ্চা ছেলেরাও এখন এ ডিশে আক্রান্ত। স্যাটেলাইট আগ্রাসন ও অপসংস্কৃতির সয়লাভের কারণে মৃত কল্প হতে চলেছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। আর সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে ইউরোপ আমেরিকার বস্তাপচাঁ সংস্কৃতি। নি¤েœ সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত কিছু তথ্য উপস্থাপন কার হল ঃ
বাংলাদেশে বর্তমানে ডিশ গ্রাহকের সংখ্যা ৪২ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে পে-চ্যানেল গ্রাহক ২লাখ এবং ফ্রি চ্যানেল গ্রাহক ৪০লাখ। গড়ে একটি টিভি দশজন দেখে থাকলে ডিশ চ্যানেলের দশর্কের সংখ্যা দাড়ায় ৪ কোটি ২০ লাখ। ডিশে মোট ৯২ টি চ্যানেল রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ টি হি›দি রয়েছে। এর অধিকাংশই জি ও স্টার গ্রুপের। জি গ্রুপের যে সব চ্যানেল রয়েছে সেগুলো হল- জি মিউজিক, জি সিনেমা, জি স্মাইল, জি অ্যানলান, জি টিভি, জি প্রিমিয়াম, জি ক্যাফে, জি নিউজ এবং বাংলায় জি বাংলা এবং ইংরেজী ভাষায় জি স্টুডিও। স্টার গ্রুপের রয়েছে-স্টার ওয়ান, স্টার প্লাস, স্টার গোল্ড, স্টার ওয়ার্ল্ড, স্টার স্পোর্টস, স্টার উৎসব এবং ইংরেজি ভাষায় স্টার মুভিজ। ৩৫ টি চ্যানেলের মধ্যে দুটি খবর ভিত্তিক।জি নিউজ এবং এনডিটিভি। একটিতে জি সিনেমা সার্বক্ষণিক হিন্দি ছবি দেখানো হয়। এছাড়া স্টার গোল্ডও মূলত সিনেমা ভিত্তিক চ্যানেল হলেও এখন মাঝে মাঝে অন্যান্য অনুষ্ঠানও প্রচার করা হয়। এগুলো হল জি মিউজিক, এমটিভি চ্যানেল ভি ও বিফোর ইউ। একটি চ্যানেল রয়েছে যেখানে সব সময় কার্টুন প্রচার করা হয় সেটি হলো নিক চ্যানেল। এছাড়া ডিজনি চ্যানেলেও মূলত ছোটদের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। স্টার প্লাস, সনি এবং আরো কয়েকটি চ্যানেলে মূলত হিন্দি ড্রামা সিরিয়াল দেখানো হয়। তবে অন্যান্য অনুষ্ঠানও কিছু কিছু থাকে। এছাড়া বাকি চ্যানেলগুলো মিক্সড। তবে নিউজ বাদে সব হিন্দি চ্যানেলেই মূলত বিনোদন কেন্দ্রিক। হিন্দি চ্যানেলে প্রচারিত বিভিন্ন সিরিয়াল সম্পর্কে গৃহিনী সাবেকুন্নাহার, জোহুরা খাতুন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া মুক্তি জানান খুবই উদ্ভট, অবাস্তব আর কাল্পনিক কাহিনীতে সাজানো হয় এসব সিরিয়াল। অধিকাংশ কাহিনীর  মূল উপজীব্য পরকীয়া, শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক সহ আরো নানাবিধ অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে সংসারে সৃষ্টি জটিলতা এবং অশান্তি। লিভ টুগেদার এবং বিবাহ বহির্ভূত সন্তানকে সমাাজে খুবই সহজভাবে মেনে নেয়া হচ্ছে বলে উপস্থাপন করা হয়, যা পশ্চিমা সমাজে চলছে। তারা আরো জানান-সব সিরিয়ালেরই ঘটনাগুলো উচ্চ বিত্ত সমাজের ড্রয়িং রুমের। ড্রয়িং রুমে বসে পাত্র পাত্রীরা পরিকল্পনা করে কিভাবে কার সংসারে আগুন লাগানো যায়। কোটনামি আর ষড়যন্ত্রই হলো অনেক সিরিয়ালের মূল বিষয়বস্তু। এরকম একটি সিরিয়াল হলো কাহানি ঘর ঘরকি। তারা বলেন, অনেক কাহিনীর সিরিয়াল ১০-১২ বছর ধরে চলছে। কাহিনী কোন দিক থেকে কোন দিকে যাচ্ছে বুঝা যাচ্ছে না। জি বাংলায় এরকম কয়েকটি সিরিয়াল হলো-এরাও শক্রু মুখোশের আড়ালে, রাজপথ, রানী কাহিনী, অসম্ভব, সুখ ঠিকানা বৈকন্ঠপুর, এই ঘর এই সংসার, খুঁজে বেড়াই কাছের মানুষ। এসব সিরিয়ালের বিষয়বস্তু খুন. ধর্ষণ, সম্পত্টিত দখল, পরকীয়া, সংসারে অশান্তি সৃষ্টির নানা কোটকৌশল ইত্যাদী। কয়েকবছর ধরে চলছে এসব সিরিয়াল। স্টার প্লাসে এরকম একটি সিরিয়ালের নাম সাথিয়া। সংসারে নানা কোটকৌশল করে কিভাবে সংসারে আগুন আগুন লাগানো যায়, সংসারে অশান্তি সৃষ্টি ঘরের বউদের তৎপরতা , নানা ষড়যন্ত্র ইত্যাদীই এসব সিরিয়ালের বিষয়বস্তু। এরকম আরেক সিরিয়ালের নাম কিউসি সাঁস ভি বহুথি। সিরিয়ালের পোশাক অশ্লীলতায় ভরা। অনেক সময় পোশাক এতই খোলামেলা থাকে বলার মতো নয়। তা ছাড়া প্রায় সময়ই থাকে আপত্তিকর দৃশ্য। যা শিশুদের সামনে দেখা যায় না। কিন্তু বাসার অনেক ছোট ছেলে মেয়ে এসব দেখছে। ইটিভি বাংলায় এরকম কয়েকটি সিরিয়াল হল-জয়া, ধুপছায়া, কৃঞ্চকলি তারেই বলি। আজ দেশের অধিকাংশই গৃহিনীদের অবসর সময় কাটে এসব সিরিয়াল দেখে। এসব দেখে দেখে তারা সংসারে নানা অশান্তি সৃষ্টিতে মেতে উঠে। পরিনামে সুখের সংসার গুলো পরিণত হয় অশন্তির নরক কুন্ডে।

* ভারতে মুক্তি পাওয়া যে কোন ছবি সাথে সাথে এদেশে সিডি এবং ডিভিডিতে নকল আকারে প্রকাশ হয়ে যায়। এছাড়া হিন্দি ছায়াছবির অশ্লীল গান এবং রিমিক্স গান নির্বাচন করে বিভিন্ন চ্যানেলে দেখানো হয় সিডি ডিভিডি আকারে প্রকাশ করা হয়। এছাড়া প্রায় সব হিন্দি নায়িকার নামে রয়েছে ছায়াছন্দের সিডি ডিভিডি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন-হিন্দি সিনেমা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে যেভাবে যৌনতাকে তুলে ধরা হয় তা হলিউডকেও হার মানায়। হিন্দির অশ্লীলতার তুলনায় হলিউডের বিকিনীপরা মেয়েদের অনেক শালীন দেখায়। তিনি বলেন- হিন্দির মাধ্যমে সেক্স নামক আফিম খাইয়ে আমাদের যুব সমাজকে ঘুমিয়ে রাখার এবং অর্থব বানানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আধিপত্যের বিরুদ্ধে তারা যেন সচেতন না হতে পারে, এ প্রশ্ন করতে না পারে সেজন্য যৌনতার আফিম নামক নেশায় ডুবিয়ে রাখা দরকার। এটি সে পরিকল্পনারই একটি অংশহিন্দি চলচ্চিত্রের গান, পপ আর রিমিক্স গানের অশ্লীলতা পর্ণোগ্রাফীর চেয়েও ভয়াবহ। কারণ এসব গানে এমন ভয়াবহ ভাবে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গীসহ নারী দেহ উপস্থাপন করা হয়, যা পর্ণোগ্রাফীর চেয়েও বেশি উদ্দীপিত করে বলে জানিয়েছে দর্শক এবং বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন হিন্দি চ্যানেলে আগে শুধু সিনেমার গান প্রচার করা হতো। এখন বিভিন্ন কোম্পানী সিনেমার গানের আদলে পপ এবং রিমিক্স গানের ভিডিও, সিডি ডিভিডি বাজারে ছাড়ছে। মূলত এগুলোই এখন বেশি প্রচার করা হচ্ছে বিভিন্ন চ্যানেলে। কারণ এতটাই অশ্লীল যে, হিন্দি চলচ্চিত্রের অশ্লীলতা এখানে মার খাচ্ছে। হিন্দি ছবির গান এবং পপ রিমিক্স গানের সিডি ডিভিডির সধ্যে চলছে এখন ভয়াবহ অশ্লীলতার প্রতিযোগিতা। ফলে সিনেমার গানের অশ্লীলতায় আনা হচ্ছে নিত্য নতুন কৌশল। হিন্দি ছবির গানে অশ্লীলতা আগে ছিল পুরুষ কেন্দ্রিক। অর্থ্যাৎ নারী দেহ প্রদর্শন করা হতে শুধু মাত্র পুরুষদের আনন্দের জন্য। তবে এখন নারীদের জন্যও বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নারীদেহের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির সাথে এখন পুরুষদের মাধ্যমে চরম অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখানো হয়। সুঠাম দেহের পুরুষ দিয়ে এখন খালি গায়ে অভিনয় করা হয় নারীদের বিনোদনের জন্য।  হিন্দি ছবির প্রায় নায়ক তাই বডিবিল্ডার।
বিয়ের একটি কমিউনিটি সেন্টারে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। বর কনে উভয় পক্ষের কয়েকশ অথিতির আগমনে ভরে উঠেছে ঘর। ভুরি ভোজনের পর অথিতিরা বিভিন্ন জায়গায় বসে গল্প গুজব, হাসি তামাশা করছেন। হঠাৎ ধুম মাচালে ধুম মাচালে ধুম—-হিন্দি গানের বিকট শব্দ আর মিউজিকে কেঁপে উঠল পুরো ঘর। তালে তালে নাঁচতে শুরু করল কয়েকজন তরুণী। সেই সাথে নায়ক নায়িকার মতো ছেলে মেয়েদের উদ্যম নাচ শুরু করল। এভাবে উদ্যম নাঁচ, গানে আর অশলীনতায় কেটে যাবে রাত। এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বাংলাদেশের শহরে নগরে গ্রামে গঞ্জে সর্বত্র হিন্দি গান বাজানো ছাড়া এখন আর বিয়ের অনুষ্ঠান কল্পনা করা য়ায় না। সরকারী অফিস, পিকনিকে আস যাওয়া, বিভিন্ন ধরণের প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা, রান্না বান্না সবই করছে হিন্দি গানের তালে তালে । গ্রামে, শহরে, উৎসবে, আনন্দে, বিয়ে, শাদী, জন্মদিন, স্কুল কলেজের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,  মার্কেট, শপিং মল, অলিগলি, পাড়ায় মহল্লায়, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, ভিডিও দোকানে, চায়ের দোকানে, বাসের ভেতর ,লঞ্চের ডেকে সর্বত্রই হিন্দি গান বাজার প্রতিযোগিতা।
* সেবকারী টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে হিন্দি গানের বিজ্ঞাপন। মোবাইলে রিং টোনে, বাস ট্রেনে ও লঞ্চের সিটে তরুণ তরুণী দেখছে হিন্দির গান। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি শেষে বাসায় যেতে যেতে ছাত্র ছাত্রীরা আলোচনা করছে সদ্য মুক্তি প্রাপ্ত হিন্দি ছবি নিয়ে। এদের কারো প্রিয় নায়ক শাহরুক, কারো সালমান, কারো আমনি খান, কারো ঐশ্বরিয়া কারো ঋত্বিক। তরুণ তরুণীদের শোবার ঘরে শোভা পাচ্ছে হিন্দি নায়ক নায়িকাদের ছবি।
* এ দেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক সিনেমায় ভারতের সিনেমার কাহিনীই শুধু নকল করা হচ্ছে না, গানের সুর, নাচের মুদ্রা, নায়ক নায়িকাদের পোশাক সবই হিন্দির অনুকরণে হচ্ছে। এদেশের সিনেমায় অশ্লীলতাও  এসেছে হিন্দির প্রভাবে। হিন্দির আগ্রাসনে বাংলার সিনেমা হলগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে। তাই ডিশের অশ্লীলতায় এদেশের মেধাহীন অর্থলোভী নির্মাতারা সিনেমায় নিয়ে এলো রগরগে নারী দেঞের প্রদর্শনী। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠান, উপস্থাপনার ধরন, বিজ্ঞাপনের ভাষা, নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান সবই হচ্ছে হিন্দি স্টাইলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. আনিসুর রহমান বলেন-এভাবে চলতে থাকলে অদুর ভবিষ্যতে এখানে সাংস্কৃতিক নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক অনুশাসন দূর্বল হয়ে যাবে।
যারা এসব হিন্দি অনুষ।ঠান নির্বিচারে দেখে এবং এর প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে তাদের মধ্যে লোভ এবং ভোগবাদী চিন্তা-চেতনা বাসা বাঁধতে থাকে। চেষ্টা সাধনা সহজে এবং বিনা পরিশ্রমে গাড়ি, বাড়ি বিত্ত-বৈভব সব কিছু পাওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠে তাদের মধ্যে। ডিশ আছে এমন সব বাসার ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে আলাপ করে দেখা গেছে, তারা বড়দের অনেক বিষয় সম্পর্কেও বেশ অবগত। হিন্দি বেশি দেখছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। উচ্চ বিত্ত শ্রেণী  আবার ইংরেজি চ্যানেল গুলো বেশি দেখছে। হিন্দির প্রভাব বেশি পড়ছে শিশু, কিশোর টিনেজার ও যুবকদের মধ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর কামরুল আহসানের মতে-মধ্য বিত্ত শ্রেণীর গৃহিনীরা খুব বেশি হিন্দি অনুষ্ঠান দেখেন এবং তাদের উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। তাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে,স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্কচ্ছেদ পরকীয়া, অশান্তি ইত্যাদী বাসা বাঁধছে পরিবারগুলোতে। হিন্দি সংস্কৃতি প্রথমত আমাদের ভারতীয়করণ এবং তারপর পশ্চিমাকরণ করছে। পার্টি ও পার্লার কালচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেয়েদের মধ্যে ওড়না না পরা এবং প্যান্ট, টি-শার্ট, টাইট সংক্ষিপ্ত পোশাক পরে বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। নাচ গানের স্কুলে শিশূদের ভিড় বাড়ছে। মদ কালচার অপরাধ, অপরাধ প্রবনতা ও পারিবারিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। গিবত, পরচর্চা, কুটনামী শিল্পরুপ পাচ্ছে। ছেলে মেয়েদের  জন্য সময় দেয়ার  হার কমছে। ধিরে ধিরে এগুলো অভ্যাসে রুপ নিচ্ছে। হিন্দি সংস্কৃতিতে প্রভাবিত এখানে একটি নতুন হাইব্রীড প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। এদের কথা-বার্তা, চাল চলন,পোশাক খাদ্যোভ্যাস রুচিবোধ সব কিছুই যেন বদলে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনো বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. হামিদা আখতার বলেন-প্রযুক্তির পরিবর্তনটা খুব দ্রুত হয়। আামদের দেশে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক প্রযুক্তি এসছে, বিকাশ লাভ করছে। ফলে নতুন এ প্রজন্মটাও হঠাৎ করে তৈরি  হয়েছে এবং উৎকট লাগছে। নতুন প্রজন্মের এ তরুণ তরুণীরা যৌনতা সম্পর্কে খুবই স্বাধীন। বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক তারা কোন অপরাধ মনে করে না। হিন্দিতে আসক্ত বিভিন্ন তরুণের সাথে আলাপ করে দেখা গেছে তাদের অনেকেরই ইতমধ্যে যৌন অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। অনেকে নিয়মিত চর্চা করে বিকৃত যৌনাচার। হিন্দি খুল্লাম নাচ এবং সিনেমা দেখা তাদের নেশায় পরিনত হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা যৌন সুড়সুড়ি লাভ করে। যৌনতার সাথে রয়েছে মাদকের সম্পর্ক। ফলে সংস্কৃতিতে তরুণ সমাজে মাদকাসক্তিও বাড়ছে। হিন্দি সংস্কৃতির প্রভাবে তরুণদের মাঝে উৎকট জীবন ব্যবস্থার একটা নজির দেয়া যায় এভাবে। চট্টগ্রামে একটি অভিজাত ভিডিও দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চার তরুণ একত্রে হরে কৃঞ্চ হরে রাম গানটি গাইতেছিল। তাদের দুইজনের মাথায় লম্বা চুল পেছনে ঝুটি বাঁধা। এক হাতে দুটি রিং, বাম হাতের তিনটি আঙ্গুলে তিনটি আংটি। দুই হাতেই দুটি ব্রেসলেট, গলায় স্বর্ণের চেইন। আরেক জনের মাথায় চুল জেল দিয়ে বিশেষ স্টাইলে কাটা। চার জনেরই প্যান্ট এমনভাবে নাভীর নীচে যে তা খুলে পরার মতো অবস্থা। চার জনের কানেই লাগানো আছে ইয়ার ফোন। চার জনেরই রয়েছে একধিক সিম। দুজনে তাদের প্রেমিকার সাথে মোবাইলে কথা বলছিল। কথা হলো তাদের সাথে। অনেক হিন্দি গান তাদের মুখস্ত। তারা সবাই নিয়মিত হিন্দি চ্যানেল দেখে। তারা সবাই হিন্দি মুখস্ত বলতে পারে।
বিশ্ব এখন চালাচ্ছে গণমাধ্যম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এ আই মাহবুব উদ্দীন আহমেদ বলেন-গণমাধ্যম আধিপত্য ও সা¤্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠিা করে। বর্তমানে সে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। মার্কিন সা¤্রাজীবাদের কয়েকটি রুপ আছে । এগুলো হলো ভাষার, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য। অর্থনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য তারা মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেছে। আর টেলিভিশনের মাধ্যমে করপোরেট সংস্থাগুলো মানুষকে তাদের পণ্যের ক্রেতা বানাচ্ছে।
বাংলাদেশে হিন্দির ব্যাপক বিস্তার সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের বিভাগের প্রফেসর কামরুল আহসান চৌধুরী বলেন-ভারত এখন বিশ্ব অর্থনীতির একটি শক্তি। অর্থনৈতিক শক্তিশালী হওয়ার কারণে এঅঞ্চলে ভারতের সংস্কৃতির প্রভাব পড়ছে। তবে রুলিং কাস বা শাসক শ্রেণী যেভাবে চাইবে ম্যাস কালচার বা গণমাধ্যম, গণমানুষের সংস্কৃতি  সে হিসাবে গড়ে ওঠেনি। আমাদের দেশে সত্যিকার অর্থে কোর রুলিং কাস গড়ে ওঠেনি। আমাদের যে রুলিং কাস ছিলতা ফার্স্ট জেনারেশন রুলিং কাসে। এরা ছিল লুটেরা ও দালাল শ্রেণীর। তাদের কাছে দেশ প্রেম ও দায়বদ্ধতা বলতে কিছু ছিল না। তারা ছিল সা¤্রাজ্যবাদীদের এজেন্ডা বাস্তাবায়নের হাতিয়ার। ফলে এখানে একটা বিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু হিন্দি নয়, হলিউড সহ আরো অনেক অপসংস্কৃতি এখানে পানির বানের মতো প্রবেশ করছে। প্রফেসর ড. আই মাহবুব উদ্দীন বলেন-যে বাজার নিয়ন্ত্রন করে সে সংস্কৃতিও নিয়ন্ত্রন করে। এটিই সাংস্কৃতিক সা¤্রাজ্যবাদের বৈশিষ্ট্য। তা ছাড়া ডিফিউশন তত্ত্ব অনুযায়ী একটি সংস্কৃতি শক্তিশালী হলে তার প্রভাব আশে পাশের অঞ্চল বা দেশে পড়ে থাকে। তিনি বলেন-এ অঞ্চলে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা এজেন্ট হিসাবে বেঁচে নিয়েছে ভারতকে।  সে জন্য আমরা দেখতে পাই বিশ্ব ব্যাংক আইএমএফ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের স্বার্থে এক সুরে কথা বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এসব প্রতিষ্ঠান ও ভারতে গ্যাস রফতানির কথা বলে, ট্রানজিট প্রদানের কথা বলে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের এত তিক্ততা , ট্রানজিট, গ্যাস, করিডোর না দেওয়ার দাবি থাকলেও এখানে ভারতের হিন্দি আগ্রাসনের প্রভাব নিয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না। প্রফেসর মাহবুব উদ্দীন বলেন-সা¤্রাজ্যবাদীরা এবং তাদের এজেন্টরা বুঝল সা¤্রাজ্যবাদকে টিকিয়ে রাখতে হলে মানুষকে সব দিকে থেকে ভূলিয়ে রাখতে হবে। সা¤্রাজ্যবাদীদের লুন্ঠনের বিরুদ্ধে যাতে মানুষ সচেতন হতে না পারে, প্রতিবাদ করতে না পারে এবং প্রশ্ন করতে না পারে  সেজন্য তাদের কোনো নেশাতে মাতিয়ে সব কিছু থেকে ভূলিয়ে রাখা দরকার বলে তারা মনে করে। তাই তাদের এ নেশা হলো সেক্স। হিন্দির মাধ্যমে আমাদের সেক্সের নেশা খাওয়ানো হচ্ছে। ভোগবাদিতার দিকে উসকে দেয়া হচ্ছে। আমাদের সম্ভবনাময় তরুণ সমাজকে বোধহীন ও রাজনীতিহীন করা হচ্ছে। তিনি বলেন-ভারত পশ্চিম বঙ্গকে মুঠোবন্দী করে রেখেছে হিন্দি আগ্রাসনের মাধ্যমে। উদ্দ্যেশ্য একটাই বাংলার শক্তিকে খর্ব করা। কারণ দুই বাংলার সংস্কৃতি যদি স্বাধীনভাবে বিকাশ লাভ করতে পারে এবং এ দুয়ের সধ্যে গভীর যোগসুত্র গড়ে উঠে তবে শুধু হিন্দিই নয়, গোটা ভারতের জন্য একটা হুমকি। সে জন্য তারা চায় না দুই বাংলার মধ্যে ভালো সম্পর্ক বিরাজ করুক। তারা চায় এ দুয়ের মধ্যে সব সময় তিক্ত সম্পর্ক সৃষ্টি করে রাখতে। সীমান্ত ইস্যু, পুশব্যাকসহ নানাবিধ সমস্যার মাধ্যমে দুই বাংলার মধ্যে সমস্যা জিইয়ে রাখা হয়েছে। দুই অঞ্চলের লোকজনকে সহজে চলাচলের জন্য ভিসা দেয়া হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন-শাহরুক খানকে তার প্রমোট করে । কারণ হলো তার মাধ্যমে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে হিন্দি কালচারকে সহজে গ্রহনযোগ্য করা সহজ। কারণ সে মুসলমান হওয়ার কারণে এসব দেশের মুসলমানরা তাকে সহজেই গ্রহন করে নেবে। আর এভাবে তার মাধ্যমে হিন্দি কালচার প্রবেশ করানো সহজ হবে। তিনি বলেন-হিন্দির আগ্রাসন ভারতের অন্যান্য প্রদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশে যেভাবে পড়েছে সেভাবে কিন্তু শ্রীলংকায় পড়েনি। কারণ তার শিক্ষিত। একবার যদি কেউ শিক্ষিত হয়ে যায় তবে সে উন্নত হয়ে যায়। প্রফেসর মাহবুব বলেন-আমরা লাস্ট জেনারেশন যারা সঠিকভাবে বাংলায় কথা বলছি এভাবে চলতে থাকলে এর পরের জেনারেশন ১০০ ভাগ বাংলায় কথা বলবে না। হিন্দি ও ইংরেজির মিশ্রণ হয়ে এ ভাষা নতুন রুপ লাভ করবে। কলকাতার লোক হিন্দি ও ইংরেজি মিলিয়ে কথা বলে। বাংলা সেখানে খুব বিপন্ন অবস্থায় আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ত্রৈমাসিক আত্মপ্রকৃতির সম্পাদক আবু ইউসুফ বলেন-এর সাথে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। কলকাতায় আমাদের কোন চ্যানেল দেখতে দেয়া হয় না, অথচ এখানে ভারতের সব চ্যানেল অবাধে দেখানো হচ্ছে। আসলে রুলিং কাস ও ধণিক শ্রেণী চাচ্ছে এখানে ইংরেজি ও হিন্দি আসুক। ডা: নাজমুল হক রবি বলেন-সামগ্রিকভাবে এ অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের সাথে সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের কৌশলও নিয়েছে ভারত। সেজন্য তারা হলিউডকে অনুসরণ করলেও একটা নিজস্বতা রজায় রেখেছে তাদের সংস্কৃতির মাঝে (নয়া দিগন্ত)।
* আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে আজ যে হিন্দির আগ্রাসন চলছে তা বাংলা ভাষাকে ধ্বংস করার পরিকল্পনারই অংশ। আমরা বর্তমানে যে বাংলায় কথা বলি এবং লিখি তা আমাদের মূল বাংলা নয়। বাঙালির মূল বাংলা ভাষার নাম ফারসী বাঙলা। তা থেকে শতকরা নব্বইটি শব্দ বাদ দিয়ে একে সংস্কৃত বাংলায় রুপান্তন করা হয়েছে। ইংরেজ এবং বাক্ষ্রণ পন্ডিতরা বাংলা ভাষা থেকে সব আরবী , ফারসী, উদূ তথা ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কযুক্ত শব্দ গুলো বাদ দিয়ে একে সংস্কৃতিতে রুপান্তরিত করেছেন। শতকরা নব্বইটি মুসলমানী শব্দ বাদ দিয়ে যে দশভাগ শব্দ রাখা হয়েছে তার ও বানান বদলে ফেলা হয়েছে। যেমন বাঙালার বদলে বাংলা, বাঙালীর বদলে বাঙ্গালী বাঙলাদেশের বদলে বাংলাদেশ চালু করা হয়েছে।
* হিন্দির প্রভাব নিয়ে শহর গ্রাম সর্বত্র এখন অভিভাবকরা ভীষণ উদ্বিগ্ন। বিদ্যুতের কল্যাণে প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে ডিশ সংস্কৃতি। অনেকে খুশির বশে ডিশ লাইন নিচ্ছেন। অনেকে নিচ্ছেন আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলার জন্য। বাজারে, রাস্তার মোড়ে গড়ে উঠা কাব, সমিতি ও দোকানে নেয়া হচ্ছে ডিশ লাইন। আর সব জায়গায় চলছে হিন্দি চ্যালেনের রাজত্ব। ছাত্ররা হচ্ছে পড়া লেখা বিমুখ। কমছে স্কুল কলেজে হাজিরার হার। খারাপ হচ্ছে পরীক্ষার রেজাল্ট। অনেকে জড়িয়ে পড়ছে নানা অপকর্মে। হিন্দির প্রভাবে দশম শ্রেণীর ছাত্র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীকে বিয়ে করার জন্য মায়ের গলায় চুরি চালায় (নয়া দিগন্ত)।
ডিশ সংস্কৃতির কারণে, স্যাটেলাইট আগ্রাসনের কারণে আমাদের সমাজ সভ্যতায় কি বিরুপ প্রভাব পড়ছে সে সম্পর্কে কিছু পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হলোঃ

* ভারতীয়তের মাঝে অ্যালকোহল আসক্তি বৃদ্ধি জন্য এখন দায়ী করা হচ্ছে দেশটির ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বলিউডকে। বলিউডের ছবিগুলো ভারতীয় যুব সমাজের অ্যালকোহল আসক্তির অভ্যাসকে সরাসরি ইন্ধন যোগাচ্ছে। দুবাইয়ে কার্ডিওলজি বিষয়ক ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। জরিপে দেখা যায়, সার্বিকভাবে ১০ শতাংশ শিার্থী (যাদেও বয়স ১২ থেকে ১৬ এর মধ্যে) ইতিমধ্যে অ্যালকোহল সেবন করছে। সেবনকারীদের মধ্যে যারা বলিউডের সিনেমা দেখে নাই তাদের চেয়ে বলিউডের সিনেমা দেখা শিার্থীদের মাঝে অ্যালকোহলের সেবনের মাত্রা ২ দশমিক ৭৮ গুন বেশি। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তন, সামাজিক প্রভাব এবং শিশু ও পিতা-মাতার আচরণের ভিত্তিতে দেখা যায়, অ্যালকোহল সেবনকারী শিার্থী দের মধ্যে যারা বলিউডের সিনেমা দেখে নাই তাদের চেয়ে বলিউডের সিনেমা দেখা শিার্থীদের মাঝে অ্যালকোহলের সেবনের মাত্রা ২ দশমিক ৭৮ গুন বেশি। হেলথ রিলেটেড ইনফরমেশন ডিসারমিনেশন অ্যাগেইনস্ট ইয়ুথ (এইচআরডিএওয়াই) এর কর্মকর্তা ড. জি পি নজর বলেন,এই ফলাফল থেকে স্পষ্ট যে-ভারতীয় যুবকদের মাঝে অ্যালকোহলের বিস্তারে সরাসরি ভূমিকা রাখছে বলিউডের ছবিগুলো (সূত্র-দৈনিক নয়া দিগন্ত)।
ডিশ সংস্কৃতির কারণে —
১.    মহিলাদের প্রতি এক অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠে।
২.    শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বাড়ে।
৩.    বিবাহ নষ্ট হয়ে যায়।
৪.    যৌন হিং¯্রতাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়।
৫.    নীতি বোধ ও ন্যায় অন্যায় বোধকে বিদ্রুপ করার প্রবণতা বাড়ে।
৬.    ব্যক্তি পরিবার ও সমাজকে নষ্ট করে।
১৯৫৮ সালে আমেরিকায় উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষদের মধ্যে একটি সমীক্ষায় প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার ছাত্রদের প্রধান সমস্যা গুলি কি? উত্তর ছিল
১. বাড়িতে যা কাজ দেওয়া হয় তা করে না।
২. জিনিসপত্রের প্রতি মমতা নেই। যেমন-বই ছুঁড়ে মারে।
৩. ঘরের আলো জ্বেলে রাখে। দরজা জানালা খোলা রাখে।
৪. ঘরে থুথু ফেলে।
৫. ঘরের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করে।
৩০ বছর পর (এক প্রজন্ম) পরে ১৯৮৮ সালে সালে এই সমীক্ষায় একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরগুলি আশ্চর্যজনকভাবে ভিন্ন। বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যাগুলি নি¤œরুপঃ
১. গর্ভপাত
২.এইডস
৩. ধর্ষণ
৪. সমকাম
৫. মাদকাসক্তি
৬. হিংসাত্বক আতংক, হত্যা, বন্দুক যুদ্ধ এবং বিদ্যালয়ের মধ্যে ছোরা ছুরির অবাধ চলাচল।
এক গবেষনায় দেখা যায়-আমেরকিায় ৮৬ শতাংশ ধর্ষণকারী বা অপরাধকারী স্বীকার করেছে যে তারা নিয়মিত বিভিন্ন চ্যানেলে , অশ্লীল রচনা, চিত্র ইত্যাদী ব্যবহার করে এবং ৫৭ শতাংশ স্বীকার করেছে তারা ধর্ষণের বা অনুরুপ যৌন অপরাধের সময় চ্যানেলে প্রচারিত বিভিন্ন ছবির অনুকরণে করছে (প্রথম আলো)।

* সারা বিশ্বে সংখ্যার বিচারে ভারত এখন খুনের ঘটনায় শীর্ষে রয়েছে। আর ধর্ষণে রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়ের ন্যাশণাল ক্রাইম ২২ টি অপরাধ দেশের উপর তথ্য সংগ্রহ করে এক একটি প্রতিবেদন করে। প্রতিবেদনে বলা হয়-২০০৭-০৮ সালে খুনের ঘটনায় বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে ভারত। সেখানে বছরে ৩২ হাজার ৭১৯ টি খুনের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা; সেখানে গড়ে বছরে ৩০ হাজার ৯৬০টি খুন। আর তৃতীয় স্থানে যুক্তরাষ্ট্র; সেখানে ১৬ হাজার ৫৯২ টি খুনের ঘটনা ঘটে। আর ধর্ষনের দিক থেকে প্রথম স্থানে যুক্তরাষ্ট্র। দ্তিীয় স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তৃতীয় স্থানে ভারত। ভারতে ২৮ হাজার ৩৫৯ টি ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। আর ডাকাতির ঘটনায় শীর্ষে রয়েছে আরেক উন্নত দেশ (!) জাপান।
* বিশেষজ্ঞ মহলের মতে-আমেরিকার ফ্রি সেক্স চ্যানেল গুলোর কারণে ব্যাপকহারে ধর্ষণ ও যৌন অপরাধ বেড়েই চলছে।
আর ভারতীয় চ্যানেল গুলোর খুন সহ অপরাধ প্রবণতা ব্যাপক হাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্বের অপরাধ বিজ্ঞানীদের এক সম্মেলনে বলা হয়-পৃথিবীর সকল অপরাধ সংস্কৃতির মূলে টিভি চ্যানেলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
* মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের র‌্যান্ড নামক অলাভজনক এক গবেষণা সংস্থার রির্পোটে বলা হয় –যুক্তরাষ্ট্রে যৌন হয়রানী ও কিশোরীদের বিয়ে বহির্ভূত গর্ভবতী হওয়ার পেছনে টিভি চ্যানেলে প্রচারিত অশ্লীল অনুষ্ঠান অনেকটা দায়ী। গবেষকরা ২০০১-২০০৪ সালের ৩য় দফা ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। তাতে দেখা যায় যে, যারা টেলিভিশনে যৌন উত্তেজক প্রোগ্রাম দেখে তাদের গর্ভবতী হওয়ার সংখ্যা যারা এসব প্রোগ্রাম কম দেখে তাদের তুলনায় দ্বিগুন। এ প্রসঙ্গে সংস্থার প্রধান সম্পাদিকা জানান, টেলিভিশনের ঐসব যৌন উত্তেজক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টিনেজ মেয়েরা যৌনতা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পায়। এ কারণে তারা মত প্রকাশ করেন যে, টিনেজ মেয়েদের গর্ভবতী হওয়ার জন্য টেলিভিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাদের গবেষণায় এটা স্পষ্ট হয় যে, টেলিভিশনের যৌনতা সম্বলিত অনুষ্ঠানগুলোতে এ ধারণা দেয়া হয় যে, গর্ভরোধক ছাড়া যৌন সঙ্গমে গর্ভধারণের সামান্য ঝুঁকি থাকে। তৃতীয় জরিপ সাক্ষাৎকারে ২ হাজার টিনেজ কিশোরীর মধ্যে ৭৯৯ জন যৌন সঙ্গমের কথা স্বীকার করে এবং তাদের মধ্যে ৭৪৪ হন কিশোরী তাদের গর্ভবতী হওয়ার বিস্তারিত কাহিনীর কথা জানান। জরিপ রির্পোটে বলা হয় গত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই টিনেজ গর্ভধারণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিডিসির হিসাব মতে-২০০৬ সালে প্রতি হাজারে ১৫-১৯ বছর বয়সী ৪২.৯ জন কিশোরী গর্ভবতী হয়। এ সংখ্যা ৪,৩৫০০০ জন। এতে আরো বলা হয় যে, সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এ সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে। স্বাস্থ্য এবং সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেছেন-টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান ও অনলাইন সেক্স  এর প্রবণতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। দৈনিক বরিশাল বার্তা সম্পাদক প্রাচুর্য রানা বলেন-আসলে হিন্দি সংস্কৃতি আর হিন্দি ফিল্ম এক নয়। হিন্দি ফিল্মের মাধ্যমে যে হিন্দি সংস্কৃতির আগ্রাসন চলছে তা সমাজে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনছে। বরিশাল সাংস্কৃতিক সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হোসাইন দুলাল বলেন-ডিশ সংস্কৃতির কুপ্রভাব এখন সমাজের রন্ধে রন্ধে প্রবেশ করছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন ভারতের হিন্দি চ্যানেলগুলো আমাদের দেশে অবাধে দেখানো হচ্ছে অথচ আমাদের দেশের বাংলা চ্যানেলগুলো ভারতে দেখানো হচ্ছে কেন? ডহন্দি চ্যানেল গুলোর অবাধ প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকা উচিত। বিশেষজ্ঞমহল মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন-সামাজিক আন্দোলন এবং সরকারী ভাবে ডিশ সংস্কৃতি প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থ্ ানা নিলে এর ভয়াবহ পরিণতি গোটা জাতিকেই বহন করতে হবে।
* স্যাটেলাইট আগ্রাসন প্রতিরোধে করণীয় ঃ-
১. যুগোপযুগী স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রন আইন প্রণয়ন এবং তার দ্রুত বাস্তবায়ন।
২. বাইরের চ্যানেল সমূহ প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা।
৩. সুস্থ রুচিশীল ও শিক্ষণীয় চ্যানেলগুলো বাকী চ্যানেল নিষিদ্ধ করা। আমাদের সংস্কৃতি ও ধর্ম বিশ্বাসের বিপরীত চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেওয়া। বিশেষ করে হিন্দি চ্যানেল সমূহে শিক্ষার উপাদানের চেয়ে সংসারে অশান্তি সৃষ্টির উপাদান  বেশি তাই সেগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত।
৪. ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচানোর লক্ষে বিশেষজ্ঞ কমিশন করে ডিশ সংস্কৃতির ক্ষতিকর দিকগুলো পর্যালোচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।
৫. এরিয়া ভিত্তিক ভিড়িও চ্যানেল সমূহ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনিদিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং নজরদারী বৃদ্ধি করা। প্রয়োজনের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা।
৬. স্যাটেলাইটের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। প্রয়োজনে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
৭. সুস্থ রুচিশীল, শিক্ষণীয় এবং নৈতিকতা সমন্বয়ে গঠিত চ্যানেল সমূহকে পৃষ্টপোষকতা দান এবং প্রচারে উদ্বুদ্ধ করা।
সর্বোপরি স্যাটেলাইটের মাধ্যামে নীতি নৈতিকতা ও নিজস্ব সংস্কৃতি প্রচার প্রসারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা। তৃতীয় বিশ্বের ক্ষুধা দারিদ্রপীড়িত প্রিয় দেশগুলোর জন্য ডিশ সংস্কৃতি একটি বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বর্তমান যুগ স্যাটেলাইটের যুগ। তাই এ স্যাটেলাইট আগ্রাসন যুদ্ধের চেয়েও ভয়ংকর। সেই আগ্রাসনের সামনে নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে স্বকীয়তা বজায় রাখা জাতীয় বিরাট চালেঞ্জ। সেই চালেঞ্জে অবতীর্ণ হয়ে নিজেদের সুস্থ মন উন্নত নৈতিক চরিত্রের আলোক শিখা দিয়ে সৎ যোগ্য ও খোদাভীরু মানুষদের নেতুত্বে একটি সুন্দর সুস্থ ও নির্মল পৃথিবী গড়াই হোক শতাব্দীর সবচেয়ে বড় চালেঞ্জ।

1 thought on “স্যাটলেইট আগ্রাসন ঃ অবক্ষয়রে কবলে মানব সভ্যতা”

  1. “খুন, ধর্ষন, বিকৃত যৌনাচার, আত্মহত্যাা, মাদকাসক্তি এবং অপরাধ সংস্কৃতি তাদের জীবনকে নরকের কুন্ডে পরিণত করেছে”. Agulo ki Bangladesh-e aage chhilona? ‘Data’ diye ki proman korte paren je ‘dish culture’ ar jonyo Bangladesh-e oporad berhechhe?

Leave a Comment