নিপাহ ভাইরাস। প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা ও সতর্কতা।

উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়টি জেলায় নিপাহ ভাইরাস আতঙ্ক বিরাজ করছে। লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, রংপুর এবং নীলফামারীতে এ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত তিনটি জেলায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২১ জন।

বাদুড়। a bat affected with nipah virus.

নিপাহ ভাইরাস কি?

নিপাহ ভাইরাস প্রথম সনাক্ত করা হয় মালয়েশিয়ার একটি শুয়োরের ফার্মে। সে সময় এ ভাইরাসে ১০৫ জন মারা যায়। Kampung Nipah নামক স্হানে এ ভাইরাসের প্রথম সংক্রমন ঘটে, তাই এ জায়গার নাম অনুসারে ভাইরাসটির নাম রাখা হয় Nipah Virus. মূলত বাদুড়, Pteropus vampyrus(flying fox), এবং শুয়োর এ রোগের উৎস।

nipah virus, নিপাহ ভাইরাস

কিভাবে ছড়ায়?

বাংলাদেশে মূলত বাদুড়ের মুখের লালা থেকে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। আক্রান্ত বাদুড় মুখে দিয়েছে এমন ফল বা খেজুরের রস যদি মানুষ খায় তাহলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এটি একটি মারাত্মক রকম ছোঁয়াচে ভাইরাস। আক্রান্ত ব্যক্তির হাচি কাশি থেকেও এ ভাইরাস ছড়ায়। বাংলাদেশে রোগীদের বেশিরভাগই আক্রান্ত হয়েছেন খেজুরের রস খেয়ে। বাদুড়ের লালা থেকে অতীতেও  বেশ কয়বার বাংলাদেশে এ রোগ ছড়িয়েছে।

Pteropus vampyrus (large flying fox) also spreads nipah virus

উপসর্গ, আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্হা, ভয়াবহতা ও মৃত্যুহার:

নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহ শুরু হয়। ফলে তীব্র জর ও মাথা ব্যথার পাশাপাশি ঘার ও পিঠ শক্ত হয়ে যায়, বমি বমি লাগে এবং আক্রান্তরা আলো সহ্য করতে পারে না। রোগের তীব্রতা বাড়লে হটাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে, অনেকেই পক্ষঘাতগ্রস্হ হয়ে পরে।

এ রোগে মৃত্যুহার খুব বেশি। আক্রান্তদের প্রায় ৭৫ ভাগ মারা যায়। বাংলাদেশের একটি পরিসংখ্যান-

২০০১- এপ্রিল, মেহেরপুর: আক্রান্ত হয় ১৩ জন, মারা যায় ৯ জন(৬৯% মৃত্যুহার)।

২০০৩- জানুয়ারি, নঁওগা: আক্রান্ত হয় ১২ জন, মারা যায় ৮ জন (৬৭% মৃত্যুহার)।

২০০৪- ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল,ফরিদপুর: আক্রান্ত ৩৬ জন, মারা যায় ২৭ জন(৭৫% মৃত্যুহার)।

২০০৫- জানুয়ারি, টাঙ্গাইল: আক্রান্ত হয় ১২ জন, মারা যায় ১১ জন(৯২% মৃত্যুহার)

২০০৭- কুষ্টিয়া, ঠাকুরগাঁ: কুষ্টিয়ায় ৮ জনের ৫ জন এবং ঠাকুরগাঁয়ে ৭ জনের ৩ জন মারা যায়।

২০০৮ – মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি: ৯ জন আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৮ জন।

নিপাহ ভাইরাসের চিকিৎসা:

এ ভাইরাস প্রতিরোধে বা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য কোন সরাসরি টিকা বা ঔষধ এখনও আবিষ্কার হয় নি। তবে উপসর্গ অনুযায়ী আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়। উপসর্গগুলি দেখা গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করালে অনেক সময় রোগী সুস্হ হয়ে উঠেন।

সতর্কতা ও প্রতিরোধ :

এ রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল উপায় হলো সতর্কতা ও সচেতনতা।

১. খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে রিরত থাকতে হবে।

২. ফলমুল না ধুঁয়ে খাওয়া যাবে না।

৩. পাখি ঠোকরানোর চিহ্নযুক্ত বা অর্ধ খাওয়া ফল খাওয়া যাবে না।

৪. নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাঁচি কাশি থেকে এ রোগ ছড়ায়। সুতরাং আক্রান্ত রোগীর সামনে গেলে মুখে রুমাল বেঁধে নিতে হবে, তার একই প্লেটের খাবার বা একই গ্লাসের পানি খাওয়া যাবে না।

৫. বাড়ির আশেপাশে বাদুড় থাকলে সম্ভব হলে দুরে রাখার ব্যবস্হা করতে হবে।

আতঙ্কিত না হয়ে বরং সবাই মিলে সতর্ক থাকলে এবং মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করলে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমন রোধ করা সম্ভব।

3 thoughts on “নিপাহ ভাইরাস। প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা ও সতর্কতা।”

  1. Pingback: নিপাহ ভাইরাস। প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা ও সতর্কতা। | স্বপ্নবাজের ব্লগ

  2. শুধুমাত্র হাতিবান্ধাতেই মারা গেছে ১৬ জন, আক্রান্ত হয়েছিল ২২ জন। এই এলাকাটা সবচেয়ে বেশি ঝুকিপূর্ণ। এখন পর্যন্ত কতজন আক্রান্ত তার সঠিক হিসাব বের করা যায় নি, কারন নিপা ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ৮ থেকে ১২ দিন পর লক্ষণ প্রকাশ পায়।
    এখন নিপা ভাইরাস থেকে বাঁচতে সতর্কতাই সবচেয়ে জরুরী, তাহলেই প্রতিরোধ সম্ভব হবে। আপনার পোস্টটা ভাল ইইছে, ধন্যবাদ।

  3. এখন অবস্হা মনে হয় নিয়ন্ত্রনে। যতটুকু দেখলাম, বাংলাদেশেই এ ভাইরাস দ্বারা সবচেয়ে বেশিবার আক্রান্ত হয়েছে। এশিয়ার আরো কয়টি দেশ অল্প কবার আক্রান্ত হয়েছে, একমাত্র বাংলাদেশেই প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে আসে নিপা ভাইরাস। বাংলাদেশে মনে হয় বাদুড়ের সংখ্যা বেশি!

Leave a Comment